গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মুখে শোনা গল্প। যার প্রমাণ রয়েছে ইউটিউবে তার সাক্ষাতকার হিসেবে। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, একদিন শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া তার অফিসে গিয়েছিলেন চাকরির জন্য। ওয়াজেদ মিয়া তখন আনবিক শক্তি কমিশন থেকে রিটায়ার্ড। তার নতুন চাকরি দরকার, অবসর জীবন ভাল লাগে না। সেসময় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। জাফরুল্লাহ চেীধুরী ওয়াজেদ মিয়ার ছোটভাইতুল্য হলেও বন্ধু স্থানীয়। সেই অধিকারবোধ থেকে গিয়েছিলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রীর স্বামী, আপনাকে আমি চাকরি পেয়ে বিপদে পড়ব নাকি?’
তখন ড. ওয়াজেদ মিয়া বলেন, ভাই খুব বিপদে আছি। আমাকে বিয়ের পর হাসিনা বলে, তুমি পণ্ডিত দেখে তোমার সাথে আমার বাবা বিয়ে দিলেন অথচ তুমি একটাও নোবেল পেলে না, ডক্টরেট হলে এক বিষয়ে, আমি দেখো কতোবার ডক্টরেট উপাধি পেয়েছি’ ( সেসময় শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি ডক্টরেট ডিগ্রি কিনেছিলেন, যারা জানেন তারা ওয়াকিবহাল যে, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিছক অর্থের বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি বিক্রি করে)।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের মধ্যে যখন আলাপ হচ্ছিল তখন শেখ হাসিনা ফোন করে আমার কাছে জানতে চান ওয়াজেদ মিয়া গেছেন কিনা? এবং চাকরি না দেওয়ার অনুরোধ করেন। আমি এরপর ড. ওয়াজেদ মিয়াকে চাকরির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করি।
এ ঘটনা বলার পেছনের কারণ ডিগ্রি, পদবি এসবের প্রতি শেখ হাসিনার লোভ ছিল। ড. ইউনূস নোবেল পাওয়ার পর তিনিও বেশ কয়েকবার নোবেল পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে শোনা যায়। সত্য-মিথ্যা জানি না। রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ার পেছনেও একটা গোপন ইচ্ছা ছিল, এটি করলে তাকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হতে পারে।
ড. ইউনূসের প্রতি শেখ হাসিনা এতো ক্ষেপে থাকার কারণ এটিও বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়া ড. ইউনূসের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে যোগাযোগ ও ভাল বন্ধুত্ব শেখ হাসিনাকে সম্ভবত ইর্ষান্বিত করত।
এরফলেই তিনি ড. ইউনূসকে পদ্মায় চুবিয়ে দিবেন এসব কথা বলেছিলেন। এছাড়া মামলাও হয়েছিল ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। শোনা যায়, কোর্ট-কাছাড়ির ৮ তলার এজলাসে তাঁকে যখনই হাজিরা দিতে হত সেসময় কোর্ট বিল্ডিং এর লিফট বন্ধ করে দেয়া হত। ৮২ বছরের অশীতিপর এই আসামিকে প্রতিবারই হেঁটে হেঁটে ৮ তলায় যেতে হত এবং এই ঘটনা নাকি ৪০ বারের মত ঘটেছে।
বাংলার ইতিহাসে গত ৯০ বছরে জন্ম নেয়া একমাত্র গ্লোবাল সেলিব্রেটি হলেন প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। শতকরা ৮৩% লোকই জানেন না কে ড.মোহাম্মদ ইউনুস! পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল, সেটা নিশ্চয়ই জানেন? সম্মানসূচক হিসেবে নোবেলের পরে কোন পুরস্কারের অবস্থান তা কি জানেন? সম্মানসূচকে-
১. নোবেল
২. অ্যামেরিকার প্রসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড
৩. মার্কিন কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড
পৃথিবীর ইতিহাসে উপরের ৩টা পুরস্কারই জিতেছেন এমন মানুষ আছে বা ছিলেন ১২ জন! বুঝতেই পারছেন পরের লাইনটা কি হবে, হ্যা, সেই ১২ জনের একজন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
মেসিকে নিশ্চয়ই চেনেন! যদি বলি এই লিওনেল মেসি লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন প্রফেসর ড. ইউনুসের জন্য, বিশ্বাস হয়, না হলেও সত্য! ‘অলিম্পিক গেমস’ পৃথিবীর সম্মানজনক প্রতিযোগিতার একটি। আর অলিম্পিকে সবচেয়ে সম্মানিত মেহমান হলেন মশাল বাহক, জাপানে অনুষ্ঠিত ২০২০ অলিম্পিকে মশাল বাহক ছিলেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
বর্তমানে বিশ্বের লিডিং ইন্টালেকচুয়ালের যেকোনো তালিকায় টপ ১০ এর ভেতরে থাকেন ড. ইউনুস। মুসলিম বিশ্বে নোবেল বিজয়ী ইউনুসের বিকল্প খুজে পাওয়াটা খুবই কঠিন, কিন্তু তিনি আমাদের বাংলাদেশের! এদেশে আর এমন ইউনুস জন্মাবে কিনা আজও সন্দেহ!
মাইক্রোসফটের বিল গেটস নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে প্রফেসর ইউনুসকে পুরো সিলিকন ভ্যালি শহর দেখিয়েছিলেন।
সারা পৃথিবীর ১০৭টা ইউনিভার্সিটিতে মুহাম্মদ ইউনূস সেন্টার আছে। ইউনিভার্সিটিগুলো নিজেদের উদ্যোগে এটা করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তাঁর মাইক্রো-ফাইনান্স। যেটা তাঁকে এবং তাঁর গ্রামীন ব্যাংকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার এনে দিয়েছিল।
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্রীভাবে ‘সুদখোর’ ডাকা হয় বারবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মুহাম্মদ ইউনূসকে যারা পছন্দ করেন তাদের বেশীরভাগও জানেন না, মুহাম্মদ ইউনূসের সুদের ব্যবসা নাই। গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠিত হলেও গ্রামীন ব্যাংকে তাঁর এক টাকার মালিকানাও নাই, শেয়ারও নাই। কখনোই ছিল না।
জিনিসটা আপনার-আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্যি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাইক্রো-ফাইনান্সের ধারণার একজন পথ প্রদর্শক।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post