বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর লাগাম টানতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে এবং বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাত দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার।
যদিও এর আগে কয়েক দফায় লকডাউন দেয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। কমেনি করোনা সংক্রমণও। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ভারত, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ এফ্রিকার তিনটি করোনার ধরণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে দেশের ৪০টি জেলাকে ইতোমধ্যে করোনার উচ্চ ঝুকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে সরকার। কয়েকদিন আগে ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলার ওপর কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়।
কুইজের ফলাফল দেখুন এই লিংকেঃ https://www.probashtime.net/quiz-sultan/
এই যখন পরিস্থিতি তখন দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসীদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। চলমান আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কি বন্ধ হচ্ছে? তার আগে লকডাউনে কি হতে যাচ্ছে দেশে সেটি দেখতে চাই।
গত বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তাদের মতামত অনুযায়ী, যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। নতুন বিধিনিষেধে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ও দোকানপাট বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল রাতে ঢাকার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে আমরা সোমবার থেকে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছি। দরকার হলে লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে। এ সময় বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পরিপালন করা হবে। চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মাঠে নামতে পারে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়লে গত ৪ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এসময় সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগেও দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলাকালে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ছিল।
ফলে স্বাভাবিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে লকডাউন শুরু হলে এবারও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচকের একজন কর্মকর্তা প্রবাস টাইমকে জানিয়েছেন, জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির ওপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।
লকডাউনে প্রবাসীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে কি না এ প্রসঙ্গে কিছু জানাতে পারেননি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। বর্তমানে এ ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১১টি দেশ থেকে কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বিমান পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ‘গ্রুপ বি’র আওতাধীন রয়েছে আটটি দেশ। সেগুলো হলো- বেলজিয়াম, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ডেনমার্ক, গ্রিস, কুয়েত এবং ওমান।
এর মধ্যে কুয়েত ও ওমান থেকে আসা যাত্রীদের বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে তিন দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। এসব দেশ থেকে যাত্রা শুরুর আগেই হোটেল বুকিং দিয়ে আসতে হচ্ছে।
ফলে দ্বিগুনেরও বেশি খরচ পড়ছে বলে জানিয়েছেন ওমান প্রবাসীরা। গ্রুপ ‘এ ও বি’তে যেসব দেশ নেই তারা ‘গ্রুপ সির অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন।
এদিকে লকডাউনে সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার কথা ভাবছে। ইতোমধ্যে আন্তঃজেলা বাস এবং আন্তঃনগর ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বাত্মক লকডাউনে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট বন্ধের কথাও ভাবছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
তবে সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে এবং এয়ারলাইন্স ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাতে চায় এয়ারলাইন্সগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছে, এয়ারলাইন্সগুলো এ পর্যন্ত সরকারের সব কথা রেখেছে, যাত্রীদের স্বাস্থ্য নিয়ে আপস করেনি। তাই তাদের ফ্লাইট পরিচালনা চলমান রাখতে দেওয়া উচিত।
বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ইমার্জেন্সি বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজে অনেক সময় যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিলে এগুলো থমকে পড়বে। আমার মতে যোগাযোগের একটা পথ খোলা রাখা উচিৎ, আকাশপথ খোলা রাখা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, আকাশপথে যাত্রীদের চলাচল অনেক নিয়মকানুনের মধ্যে হয়। অনেক স্তর পাড় হয়ে প্লেনে ওঠে যাত্রীরা। তাছাড়া আকাশপথে চলাচলের কারণে কোনো যাত্রীর করোনা হয়েছে বলে আমরা কখনও শুনিনি। সেক্ষেত্রে আকাশপথ চালু রাখা যেতেই পারে।
এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি এত বাড়ার পরেও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। তারা ফ্লাইট বন্ধ করেনি। যাত্রী নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হলে তারা যাত্রী নিত না। তারা যেহেতু ফ্লাইট চালাচ্ছে তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলতেই পারে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার যখন ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল তখন এয়ারলাইন্সগুলো স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সিভিল এভিয়েশনের মোট ৩৫টা নির্দেশনা মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এয়ারলাইন্স থেকে করোনা ছড়িয়েছে গত ১ বছরে এমন কোনো নজির নেই। তাই এভিয়েশন সেক্টরের স্বার্থে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post