বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী বহু সমস্যার মধ্যে একটি ছিল পেগ্যাসাস। নজরদারির অভিযোগে চলছিল মামলা। শুক্রবার আমেরিকার একটি ডিসট্রিক্ট কোর্ট পেগ্যাসাসের পেরেন্ট অর্গানাইজ়েশন এনএসও–কে গোপনীয়তা ভঙ্গ ও অবৈধ নজরদারির অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে মামলা চালু রেখেছে।
শুক্রবারের এই রায়ে ডিস্ট্রিক্ট জাজ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এই মামলা। এ কথা স্পষ্ট যে ইজ়রায়েলের এনএসও তাদের স্পাইওয়্যার পেগ্যাসাস অন্তত ১৪০০ জনের ফোনে তা অবৈধ নজরদারি ও তথ্য হ্যাক করার জন্য ইনস্টল করেছে। এটা তারা করতে পারে না। এর ফলে ইউজ়ারদের রাইট টু প্রিভেসি ভঙ্গ হয়েছে। কারণ এনএসও পুরোটাই করেছে তাঁদের না জানিয়ে।
২০১৯–এর অক্টোবরে হোয়াটসঅ্যাপ চুক্তিভঙ্গ ও গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। তাদের দাবি ছিল, তারা তাদের গ্রাহকদের যে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন–এ তা ব্যাহত হয়েছে। যদিও এনএসও–র দাবি ছিল, সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার জন্য তারা এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার। এই সংস্থা কোনও ব্যক্তি বা অন্য কাউকে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করে না।
শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকারকেই তারা বিক্রি করে। সরকার তারপরে পেগ্যাসাস নিয়ে কী করে, সেটা তাদের মাথাব্যাথা নয়। এই নিরিখে আদালতের কাছে তারা ইমিউনিটির আবেদন করলেও সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে এনএসও মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালে গত বছর সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। তার পরেই ডিসট্রিক্ট কোর্টে রেগুলার হিয়ারিং শুরু হয়।
এই বছরের প্রথম দিকে আদালত থেকে ওই স্পাইওয়্যারের সোর্স কোড হোয়াটসঅ্যাপকে দিলে বলে আদালত। কিন্তু শুক্রবার দেখা যায়, সেই সোর্স কোড কেবল ইজ়রায়েলে থাকা কোনও ইজ়রায়েলি দেখতে পাবেন। পর দিন ক্যালিফর্নিয়ায় ডিস্ট্রিক্ট জাজ ফিলিস হ্যামিলটন হোয়াটসঅ্যাপের করা মামলাকে মান্যতা দিয়ে বলেন, ‘এনএসও সত্যিই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরে অবৈধ নজরদারি করত। সেটা তারা করতে পারতে না।’ হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান উইল কাথকার্ট বলেন, ‘এটা আমাদের বিরাট জয়।’ অ্যাপল–ও এর আগে এনএসও-র বিরুদ্ধে মামলা করলেও তা সেপ্টেম্বরে তুলে নেয়। পরবর্তী শুনানি থেকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
কী এই পেগ্যাসাস?
ইজরায়েলের সাইবার–ইন্টেলিজেন্স ফার্ম এনএসও-র তৈরি করা একটি স্পাইওয়্যার। মোবাইল–সহ নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আড়ি পাতার জন্য এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। কে ফোন করেছে, ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে কী কথা হচ্ছে, ফোনে কী কী নথি রয়েছে, তা সবই এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে জেনে ফেলা সম্ভব। ফোনে আসা ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করে বা হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে এই স্পাইওয়্যার ফোনে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়।
২০১৯–এই ‘পেগ্যাসাস প্রজেক্ট’ বলে একটি তদন্ত শুরু করেছিল ষোলোটি সংবাদমাধ্যম। ২০২১–এর ১৮ জুলাই সেই তদন্তের রিপোর্টের কিছুটা অংশ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০১৯–এর মে ও সেপ্টেম্বর মাসে গোটা বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১৪০০ জনের ফোন হ্যাক হয়েছে যার মধ্যে অন্তত ২০ জন ভারতীয়। হোয়াটসঅ্যাপের প্রকাশ করা তালিকায় নাম ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, প্রফুল প্যাটেল, ভীমা কোরেগাঁও মামলার সঙ্গে যুক্ত একাধিক আইনজীবি, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর।
এই নিয়ে ভারতীয় সংসদও উত্তাল হয়ে ওঠে। মোদী সরকার বিরোধীপক্ষের উপরে নজরদারি চালাচ্ছে কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠতে থাকে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পেগ্যাসাস দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্র — এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন। যদিও সেই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল মোদী সরকার। তারা জানায়, সরকার তার নাগরিকদের ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ এবং নির্দিষ্ট কারও উপরে সরকারি নজরদারির অভিযাগ ভিত্তিহীন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post