১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মলাভ করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়ে লিখেছেন আশরাফুল ইসলাম রানা
যেভাবে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ
পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভাগ হয় ভারতবর্ষ। গোটা পাকিস্তানে সে সময় প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লীগ। তখন ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান ও খাজা নাজিমুদ্দিন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী নেতাদের মধ্যে দুইটি ভাগ ছিল। এর মধ্যে উদারপন্থিরা ছিলেন কোণঠাসা। তারাই একটি রাজনৈতিক দল গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হকসহ কয়েকজন একটি সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব করেন। সেই সভা আহ্বানের প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান।
আরো পড়ুনঃ ইসলামিক কুইজে অংশগ্রহণ করে জিতে নিন নগদ অর্থ পুরষ্কার!
কিন্তু সে সভা করার জন্য কোনো অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহ্বান জানান। সেখানেই ২৩ জুন বিকেলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
এরপর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা ভাসানী, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আহমেদ আলী খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান। সাধারণ সম্পাদক হলেন শামসুল হক। ট্রেজারার হন ইয়ার মোহাম্মদ খান, যার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে প্রথম সভার আয়োজন হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক থাকলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এভাবেই প্রথম ৪০ জনের কমিটি গঠিত হয়।
৪২ দফা ও ভাষা আন্দোলন
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগই ছিল প্রথম বিরোধী দল। দলটি জন্মলগ্নেই প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ৪২-দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। পাকিস্তানি শাসনের সূচনালগ্ন থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি, এক মানুষ এক ভোট, গণতন্ত্র, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন, সংসদীয় সরকার পদ্ধতি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং দুই প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান দাবি। ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার পূর্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনে আওয়ামী লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও দলের নাম পরিবর্তন
আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরুর সময় থেকে এর নাম নিয়ে মতভেদ ছিল। একটি অংশ চাইছিল দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হোক। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক সাধারণ নির্বাচনের সময় একটা সমঝোতা হয়েছিল যে, এই দলটি একটি অসাম্প্রদায়িক দল হবে।
২১ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে, যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩টি আসন।
যুক্তফ্রন্টের প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। নির্বাচনে জয়লাভের পর এ কে ফজলুল হক প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
শেখ মুজিবুর রহমান পান কৃষি, ঋণ, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৫৫ আওয়ামী মুসলিম লীগে যে কাউন্সিল হয়, সেখানে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ফলে অমুসলিমরাও এই দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান।
আওয়ামী লীগে ভাঙন
১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে এই রাজনৈতিক দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। তখন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সরকারে।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কয়েকটি সামরিক চুক্তি হয়। সিয়াটো ও সেন্টো সামরিক জোটে পাকিস্তান সদস্য ছিল। মওলানা ভাসানী ও দলের মধ্যে থাকা বামপন্থিরা চাপ দিচ্ছিলেন যাতে আওয়ামী লীগ মার্কিন সামরিক জোট থেকে বেরিয়ে আসে।
সোহরাওয়ার্দীকে মার্কিন চুক্তির সমর্থক বলে মনে করা হতো। পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি করছিলেন মওলানা ভাসানী, কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী। ওই বিরোধের একটা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন মওলানা ভাসানী। সেই বছর ২৫ জুলাই তিনি ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলন
১৯৫৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক আইন জারি করেন। তিনি জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। কিন্তু এর মাত্র ২০ দিন পর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জাকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা দখল করেন আইয়ুব খান। নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে নিজস্ব ধ্যান ধারণায় দেশ চালাতে শুরু করেন। এই ঘটনার পর পুরো পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
১৯৬৩ সালে মৃত্যুর পূর্বে সোহরাওয়ার্দী তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল নিয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামে আইয়ুববিরোধী একটি মোর্চা গঠন করেন। এই ফ্রন্ট গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানায়। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা হন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তার ধানম-ির বাসভবনে কেন্দ্রীয় সদস্যদের সভায় তিনি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টা করে।
৬-দফা আন্দোলন ও আইয়ুব খানের পতন
১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ছয়-দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকারসহ কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন; বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা ছাড়া প্রাদেশিক সরকারের হাতে সব ধরনের ক্ষমতা প্রদান; পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য স্বতন্ত্র মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন; প্রাদেশিক সরকারের হাতে কর ও শুল্ক আদায়ের অধিকার ন্যস্তকরণ; প্রাদেশিক সরকারের হাতে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান এবং সবশেষে, নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য প্রদেশগুলোকে আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা প্রদান।
৬-দফা কর্মসূচি তাৎক্ষণিকভাবে দেশের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ৬-দফার প্রতি আইয়ুব সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই কঠোর। আইয়ুব খান ৬-দফা কর্মসূচিকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন এবং অস্ত্রের ভাষায় এই দাবি প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু ৩ মাসব্যাপী সারা দেশে গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু করেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে আট বার গ্রেপ্তার করা হয় এবং অবশেষে ১৯৬৬ সালের ৮ মে কারাগারে বন্দি করা হয়। এরপরই দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা শুরু করে। এই আন্দোলন দমাতে ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ (কারাবন্দি) ৩৪ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। অবশ্য এই মামলার বিরূপ ফল দেখা দেয়। এই মামলার ফলে ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন শুরু হয় এবং আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
সত্তরের নির্বাচন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম
সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন দ্রুত সময়ে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে এবং কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬২টি আঞ্চলিক আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হন।
কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ও সামরিক শাসকরা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা ছাড়তে গড়িমসি শুরু করে। এ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণআন্দোলনের ডাক দেন এবং দেশবাসী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তার ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ংকর রাতে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে পাকিস্তানের ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন) এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এই প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।
বাকশাল গঠন
১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে (১৯৭২-৭৫) এবং পরবর্তী সময়ে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে (১৯৯৬-২০০১) দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন ছিল। প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এ সময় সরকারকে শুরু থেকেই সবকিছুকে পুনর্গঠন করতে হয়েছিল।
কিছু বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সঙ্গে ঢাকায় বসবাসরত পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে চারজন শীর্ষ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগে দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙন দেখা দেয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। এরপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব নেন। এরপর থেকে তিনি দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সেনাশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অংশ নেয়। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন হলে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত জোট সরকার গঠন করা হয়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনেও জয়লাভ করে টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post