করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বুধবার রাত ১টা থেকে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কমলাপুর থেকে রেল ছেড়ে যাবে না, দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও কমলাপুরে রেল আসবে না।
মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকেলে রাজধানীর রেল ভবনে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরে রাত নয়টায় এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে প্রজ্ঞাপনে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে পারবে বলে জানানো হয়।
আরো পড়ুনঃ ইসলামিক কুইজে অংশগ্রহণ করে জিতে নিন নগদ অর্থ পুরষ্কার!
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জে জনসাধারণের চলাচল বন্ধে গতকাল ২২ জুন সকাল ছয়টা থেকে আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলা শহরের জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ রাখতে আজ বুধবার রাত ১টা থেকে ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি, এমন জেলা তথা চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা বা চাঁদপুর এলাকায় রেল যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু ও আক্রান্তের হার সে চিত্রই দেখাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাসের শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে আবারও আইসিইউ সংকট তৈরি হচ্ছে। এরইমধ্যে রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড ১৫টি সরকারি হাসপাতালের তিনটিতেই কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই।
এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে দ্রুত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগী শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যা থেকে শুরু করে কেবিন ও আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়ছে।
অনেক জটিল রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ও কেবিন সাপোর্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে রাজধানী ঢাকার অন্যতম তিনটি সরকারি হাসপাতালেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। অথচ গত সপ্তাহেও এসব হাসপাতালের সাধারণ শয্যাসহ আইসিইউর অনেক বেড ফাঁকা ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ২৭৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে একটিও খালি নেই। বরং শয্যার বাইরে আরও তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০টি আইসিইউর কোনোটিই খালি নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ৩৪৬টি।
আর ২০টি আইসিইউ শয্যার কোনোটি খালি নেই। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২৬৩টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ২৪টি আইসিইউ শয্যার একটি মাত্র খালি রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৭৩টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই।
এর বাইরে করোনা ডেডিকেটেড কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৬৯ সাধারণ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ৫৪টিতে, ফাঁকা ১১৫টি। ২৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০টিতে। খালি রয়েছে ১৬টি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৭৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৫৭টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ১৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১০টি খালি রয়েছে। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৯০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৬৮টি ফাঁকা আছে, ছয়টি আইসিইউ শয্যার চারটি ফাঁকা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ২৩০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৩৮টি ফাঁকা রয়েছে। ২০টি আইসিইউ শয্যার ১৬টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে, চারটি ফাঁকা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালের ৪৭০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ফাঁকা ৩৭৩টি। ১৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৭টি খালি রয়েছে। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৪৮টি শয্যাই ফাঁকা। এ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা নেই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post