নজরদারির দুর্বলতার কারণে অভিবাসন খাত দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক দুর্নীতির শিকার। বিগত বছরগুলোতে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের নামে এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, যার ফলে রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের সহযোগীরা লাভবান হলেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা। বিশেষজ্ঞরা এই দুর্নীতির চক্র ভেঙে সাব-এজেন্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান শ্রম উৎস দেশ, আনুমানিক ৭৫ লক্ষ বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন, যা আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে। এই অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যা বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য।
অর্থনীতিতে এত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সত্ত্বেও, অভিবাসন খাতের দুর্নীতি নিরাপদ অভিবাসনকে একটি দুষ্কর বিষয়ে পরিণত করেছে। শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১০ বছরে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো হুন্ডির মাধ্যমে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক হিসাব অনুযায়ী, শুধু ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত বিষয়েই ৬টি দেশে গত ১০ বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই কারণে অভিবাসন খরচ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা দুর্নীতি ও প্রতারণা কমাতে রিক্রুটিং এজেন্সি এবং তাদের সাপ্লাই চেইনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, সাব-এজেন্টদের নিবন্ধনের পাশাপাশি পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াটিকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বরাবরই অভিবাসন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে আসছি, কারণ এই খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। অভিবাসী কর্মীরা এখানে তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে, আর সরকারসহ অন্যরা এটি নিয়ে টানাটানি করে। দরিদ্র কর্মীরা এই বিনিয়োগের জন্য তাদের ঘর-বাড়ি, জমি পর্যন্ত বন্ধক রাখে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে যে এই খাত দেশের অর্থনীতির একটি বিশাল অংশ, এবং এখানে সরকারের আরও বেশি মনোযোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যখন সরকার সত্যিকার অর্থে এই খাতের দায়িত্ব নেবে, তখনই এখানে সঠিক বিনিয়োগ হবে এবং কর্মীরা উপকৃত হবে, যা অভিবাসন ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে।”
এই খাতের উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব একটি কার্যকর মডেল হতে পারে। এছাড়াও, কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, “অভিবাসন খরচ কমাতে হলে পুরো মানি ট্রেইল, অর্থাৎ অর্থের উৎস থেকে গন্তব্য পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ খতিয়ে দেখতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিবাসন খাতের দুর্নীতি এখন প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে এবং এই চক্র আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। এই দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে সকল সংস্থার সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এই সংস্করণটি আরও স্পষ্ট, সুগঠিত এবং তথ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এখানে মার্জিত ভাষা ও রুচিশীল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সংবাদটিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post