ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটসহ মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) জমা পরলেও ঘুম ভাঙছে না সংস্থাটির। অদৃশ্য এক চাপে তদন্ত পর্যন্ত করতে রাজি নয় দুদক।
তবে দুদকের এক কমিশনার পদ মর্যাদার কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কাছে অনেকেই অভিযোগ করেন। বিষয়টি মন্ত্রীসভার একজন সদস্য বলে একটু সময় লাগছে। যদিও পিরোজপুর সদরের বাসিন্দা এলাকাবাসীর পক্ষে রফিকুল ইসলাম সুমন স্বাক্ষর করে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এ্যাড. রেজাউল করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর। এরপর প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দুদক।
দুদকে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এবং বর্তমান মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি ও তার পরিবার, ভাই ও বোন এবং বোন জামাইদের দুর্নীতি ও অনিয়ম, জমি দখল নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডারবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, আত্মসাৎ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, শ ম রেজাউল করিম এমপি এর নিজ নামে একাধিক রাজউকের প্লট নিয়েছেন।
তিনি রাজউক এর আইন ভঙ্গ করে উত্তরা ৭ নং সেক্টরে ৫ কাঠা ও পূর্বাচল প্রকল্পে ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এছাড়াও গ্রামে থাকে ঢাকায় কোন দিন আসেনি এমন বন্ধুদের নামে রাজউক আইন ভঙ্গ করে পূর্বাচল প্রকল্পে একাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন শ ম রেজাউল করিম এমপি। বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি ও তার ছোট ভাই নুরে আলম সিদ্দিকী শাহিন পাওয়ার অব এ্যাটর্নী নিয়ে রেখেছেন। এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি ভোরের পাতার হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। এমনকি এই নথিপত্র দুদকেও জমা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, শ ম রেজাউল করিম এমপি মন্ত্রী হওয়ার পর তার নিজ উপজেলায় ভূমি অফিসে প্রায় দেড়শ দলিল করেছেন নিজ নামে। শত শত বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়া, শ ম রেজাউল করিম এমপি এর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ভুয়া।
তিনি ২০০৫ সালে রাজাকার সাঈদীর সহযোগিতা নিয়ে গেজেটে নিজের নাম, তার বাবার নাম, তার ২ (দুই) ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার জন্ম তারিখ অনুযায়ী ৮ (আট) বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা দেখিয়েছেন। যা ভুয়া জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করেছেন।
শ ম রেজাউল করিম এমপি গণপূর্তমন্ত্রী হয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে জামায়াত বিএনপি কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসিয়ে নিজে সুবিধা নিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন। শ ম রেজাউল করিম এমপি তার নিজের পত্রিকায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সকল বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য নিজের ডিও লেটার দিয়ে নির্দেশ দেন এবং সব বিজ্ঞাপন নিয়ে দুর্নীতি করেছেন।
শ ম রেজাউল করিম এমপি এর ছোট ভাই নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীনকে পিএ বানিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সকল কাজ করিয়েছেন এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। তার আপন বোন জামাই বিএনপি নেতা আবুল কাসেমকে দিয়ে পিরোজপুরে সকল নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।। শ ম রেজাউল করিম এমপি মন্ত্রীর প্যাডে তার নির্বাচনী এলাকায় সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে নিজস্ব লোকের নাম দিয়ে সরকারী কাজে বাধা সৃষ্টি করিয়েছেন।
শ ম রেজাউল করিম এমপি এর ছোট ভাই নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নিজের নামে ২০১৯ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে লাইসেন্স নিয়ে পিরোজপুরের সকল কাজ অবৈধভাবে করেছেন।
অথচ তার লাইসেন্স ৫-১০ লাখ টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও কম্পিউটারের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে অবৈধভাবে টেন্ডারে কাজ নিয়েছেন। অনেক রাস্তার কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মস্যাৎ করেছেন। অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেছেন নাজিরপুর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন।
শ ম রেজাউল করিম এমপি এর ছোট ভাই নুরে আলম ছিদ্দিকী শাহীন তাদের পত্রিকায় কাজের টেন্ডার ছাপিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না নিয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগসাযোশে শত শত কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন অবৈধভাবে।
শ ম রেজাউল করিম এমপি এর আরো এক ছোট ভাই নওশের বাদশা শামীম গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ও অধিদপ্তরগুলোর ডিপোজিট টাকা নিজে কমিশন খেয়ে পছন্দ মতো ব্যাংকে ডিপোজিট রেখেছেন। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত। শ ম রেজাউল করিম এমপি বড় ভাই নজরুল ইসলাম বাবুল নাজিরপুর উপজেলায় হিন্দুদের জমি দখল নিয়েছেন ও বদলি এবং নিয়োগ বাণিজ্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ ম রেজাউল করিম এমপি এর দুর্নীতির বেশির ভাগ অর্থ বেনামে রেখেছেন। তার ছোট ভাই শামীমের স্ত্রী ও শ্যালকদের নামে এবং শ ম রেজাউল করিম এর দেশের বইরে বসবাসরত বন্ধুদের নামে রেখেছেন এই অবৈধ টাকা।
শ ম রেজাউল করিম এমপির ছোট ভাই নুরে আলম ছিদ্দিকী শাহীন তার ভাইয়ের ক্ষমতা প্রয়োগ করে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এফ-ব্লকে ২৬০০ ফিট ২ টি ফ্লাট এবং উত্তরায় ১টি ফ্লাট কিনেছেন। যা তার শ্যালিকার নামে রয়েছে।
শাহিন তদবির বানিজ্য, জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন। তার সিটি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংককে একাউন্টে শত কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়াও পূবালী ব্যাংক নাজিরপুর শাখায় রয়েছে তার কোটি কোটি টাকা।
সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যশনাল ঠিকাদারি লাইসেন্স এর এই একাউন্ট নং- ০৪৯৩৩০০১৫৪৫ এ শত কোটি টাকা রয়েছে শাহিনের। এছাড়াও সিটি ব্যাংককের একাউন্ট নং-২২০১৯০৭৯৫৭০০১ এ শত কোটি অবৈধ টাকা রয়েছে তার। শাহিনের শ্যালিকা আসমা আক্তার মুক্তির নামে ব্যাংক এশিয়ায় কোটি টাকা রেখেছেন শাহিন। এদিকে শাহিন ইত্যেমধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, ভারত, সুজারল্যান্ড একাধীকবার বিনোদন ভ্রমণ করেছেন। সিঙ্গাপুর ব্যাংকে টাকা পাচার করেছেন। শহিনের পাসপোর্ট নং-বিআর ০০২২২৫১। কাগজপত্র সংযুক্ত।
শ ম রেজাউল করিম এমপি মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় ডি-ব্লক এ বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর সাথে অবৈধভাবে খাস জমি দখল করেছেন। আফতাবনগর রামপুরা ব্রীজের পরে জমি কিনেছেন তিনি। বেইলী রোড এ ফ্লাট ও পল্টনে মেহেরবা প্লাজায় ফ্লোর কিনেছেন। তার এপিএস জুয়েল সেগুনবগিচায় ফ্লাট এবং ডেমরায় ২টি ৬তলা বাড়ি কিনেছেন। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে তিনি টাকা পাচার করেছেন । এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক বলেন, এ বিষয়ে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কয়েক মাস আগেই নিজ কার্যালয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, এরকম অভিযোগ মন্ত্রী, এমপিদের বিরুদ্ধে যে কেউ করতে পারে। যদি অভিযোগ আসে তদন্ত করে দেখবেন। এটা নিয়ে কমেন্ট করার কিছু নেই। আমি অসৎ না, আমি দুর্নীতিবাজ না, অভিযোগ যদি আসে তদন্ত করে পায় সেটা দেখবেন।
সূত্রঃ দৈনিক ভোরের পাতা
https://www.youtube.com/watch?v=ZHZrosYGbDw&t=242s
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post