জাহাজ একটি বৃহদাকার নৌযান, যা সমুদ্র বা নদী পথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। আধুনিক সভ্যতায় জাহাজের অবদান অপরিসীম, তবে সমুদ্রের অতল গভীরতায় হারিয়ে গেছে অনেক মূল্যবান জাহাজ। বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রতলে ডুবে থাকা এসব জাহাজের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হলো ‘টাইটানিক’, যার মতো বহু বিলাসবহুল জাহাজ পানির নিচে আটকে আছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, আজ পর্যন্ত সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজের সংখ্যা প্রায় ৩ মিলিয়ন।
অথচ, এসব বিলাসবহুল জাহাজের সঙ্গে হারিয়ে গেছে কোটি কোটি ডলার মূল্যমানের সম্পদ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। তাহলে প্রশ্ন কেন এসব জাহাজ উদ্ধার করা হয় না?
প্রথমত, উদ্ধার খরচ অত্যন্ত বেশি। জাহাজ তোলার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যা অনেক ক্ষেত্রেই জাহাজের মূল্যমানের চেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে কস্টা কনকর্ডিয়া নামক বিলাসবহুল প্রমোদতরীটি ইতালির একটি দ্বীপের কাছে ডুবে যায়, এবং এর উদ্ধারকাজে ২ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়—যা জাহাজের নির্মাণ খরচের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
আরেকটি প্রধান কারণ হলো সমুদ্রের তলদেশে জাহাজের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করা অনেক সময় কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে, এমনকি অবস্থান নির্ধারণ করা গেলেও, জাহাজের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় পানির নিচে থাকার ফলে জাহাজের যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরে আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না।
এছাড়া, জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর তা পরিবেশগতভাবে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়, যেখানে সামুদ্রিক প্রাণীরা বাস করে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক সময় জাহাজ উদ্ধারের কাজ পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
সামরিক জাহাজগুলোও সমুদ্রের তলদেশে হারিয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার করা হয় না, তবে তার কারণ ভিন্ন। সামরিক বাহিনীর একটি প্রচলিত নীতি রয়েছে, যা অনুসরণ করে বলা হয়—”যেখানে ধ্বংস, সেখানে কবর”। ফলে, মূল্যবান সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও, এসব জাহাজ উদ্ধার করা হয় না।
অপর একটি কারণ হলো আইনি এবং অনুমতি সংক্রান্ত জটিলতা। সমুদ্রের তলদেশে জাহাজ উদ্ধারের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। এসব কারণে অনেক জাহাজ কোম্পানি ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারে আগ্রহী হয় না।
অতএব, কোটি টাকার জাহাজ ডুবে গেলেও অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং আইনি কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post