ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ফরাসি দ্বীপ মায়োটে আঘাত হেনেছে ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় চিডো। ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী তাণ্ডবে দ্বীপটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শতাধিক প্রাণহানির পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
গত শনিবার স্থানীয় সময় রাতে ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে মায়োটে আছড়ে পড়ে এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। প্রবল বাতাসের সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ ঢেউ এবং ভারী বৃষ্টিপাতে দ্বীপটির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা মানুষ। অসংখ্য ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বীপটি এখন কার্যত একঘরে।
মায়োটে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। দুর্যোগের পর সেখানে খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেঁচে থাকা মানুষজন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মামুদজু শহরের এক বাসিন্দা জানান, “তিনদিন ধরে আমাদের কোনো পানির ব্যবস্থা নেই। আমরা জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো মেটানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু জানি না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
আরেকজন বাসিন্দা জন ব্যালোজ বলেন, “ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন মনে হচ্ছিল, এটাই আমার শেষ দিন। বাতাসের প্রচণ্ড গতির শব্দে আমি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকছিলাম।”
প্রত্যক্ষদর্শী মোহামেদ ইসমাইল এই পরিস্থিতিকে ‘পারমাণবিক যুদ্ধের পরবর্তী দৃশ্যের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অস্থায়ী ঘরবাড়ি একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে।”
দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত মায়োট দীর্ঘদিন ধরেই ফরাসি অর্থনৈতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। চিডোর তাণ্ডব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
দুর্গত অঞ্চলে উদ্ধারকাজ চলছে, তবে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকট মোকাবিলায় সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post