ফেনীতে শশুর বাড়িতে সাবিনা ইয়াসমিন (৩৩) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আনুমানিক বিকেল ৩ টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ছোচনা এলাকার সওদাগর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গৃহবধূর শশুর বাড়ির লোকজনের দাবি কলহের জেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সাবিনা। অপরদিকে সাবিনার মায়ের দাবি তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত সাবিনা ইয়াসমিন শর্শদির ছোচনা এলাকার সৌদি প্রবাসী মহসিন উল্লাহ মামুনের স্ত্রী। তিনি ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের মো. ইব্রাহিমের মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, সাবিনার স্বামী মহসিন উল্লাহ মামুন গত এক বছর পূর্বে সৌদি আরব যান। প্রবাসে যাওয়ার আগে মামুন তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় থাকতেন। মামুন সৌদি আরব যাওয়ার পর থেকে সাবিনা তার দুই সন্তান নিয়ে শশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। মামুন দেশে না থাকাতে সাবিনার সাথে তার শশুর বাড়ির লোকজনের প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো।
রোববার দুপুরে সাবিনার শাশুড়ীর সাথে ঝগড়া হয় তার। এরপর নিজ শয়নকক্ষে গলায় দড়ি দিয়ে সাবিনা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি শশুরবাড়ির লোকজন। তাৎক্ষণিক পুলিশ বা প্রশাসনকে অবহিত না করে সাবিনাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন সাবিনার শাশুড়ী ফিরোজা, ভাসুন নয়ন ও কয়েকজন প্রতিবেশী। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে সাবিনার মরদেহ মর্গে প্রেরণ করেন।
নিহতের মামাতো দেবর প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেন সাদ্দাম বলেন, আমার স্ত্রী কাছে শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই সাবিনার মরদেহ খাটের ওপর শোয়ানো। সিলিংয়ের সাথে একটা দড়ি ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। পরে সাবিনার শাশুড়ী ফিরোজা বেগম, ভাসুর নয়ন, চাচাতো ভাই ফয়সালকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
সাবিনার মা জান্নাতুল ফেরদৌস মায়া বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি তাকে হত্যা করা হয়েছে। শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে তাকে ন্যূনতম সম্মান দেওয়া হতো না। তার ভাসুর ও জা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো। বিভিন্ন সময় তার শশুর-শাশুড়ী, ভাসুর ও তার স্ত্রী আমার মেয়েকে শারিরীক মানসিক নির্যাতন করে আসছে। আমার মেয়ের ঘরে দুইটা সন্তান আছে। সে কোনভাবেই আত্মহত্যার মতো এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সাবিনার পিতা মো. ইব্রাহিম বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার শশুর হাবিব উল্লাহ, ভাসুর নয়ন ও তার স্ত্রী জোলেখা আক্তার আমার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই৷
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রহুল মোহছেন সুজন বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বেই তিনি মারা গেছেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে শর্শদি ইউনিয়নের ছোচনা গ্রামের হাবিব উল্লাহর ছেলে মহসিন উল্লাহ মামুনের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকার মো. ইব্রাহিমের বড় মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে। মামুন-সাবিনা দম্পতির ৮ বছরের এক ছেলে ও ৪ বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post