সৌদি আরবের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্প্রতি বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ থাকায় শ্রমবাজারটি কার্যত রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ভিসা বন্ধের ফলে ভ্রমণেচ্ছু ও কর্মসংস্থান প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা হতাশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরে আমিরাতে কর্মী পাঠানোর হার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিএমইটির (জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৯৮,৬১৪ জন বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা মাত্র ৪৭,১৬৫ জনে সীমাবদ্ধ।
আমিরাত সরকার শিক্ষাগত সনদধারী কিছু চাকরিপ্রত্যাশীকে ভিসার সুযোগ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিয়োগদাতা পরিবর্তনের সুযোগও বন্ধ থাকায় অনেক প্রবাসী কর্মী চরম বিপাকে পড়েছেন।
২০১২ সালে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আমিরাতের কর্মসংস্থান ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতি বছর দেশটিতে কর্মী পাঠানোর হার ৩০ হাজারের নিচে নেমে আসে এবং দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এই অবস্থার অবসান হয়নি।
২০২২ ও ২০২৩ সালে বিশেষ শর্তে ভিজিট ভিসা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। এর মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি আমিরাতে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু ২০২৪ সালে পুনরায় ভিসা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমবাজার সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ভিসা নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ। এর মধ্যে রয়েছে ভিজিট ভিসায় গিয়ে দেশে না ফেরা, সনদ জালিয়াতি এবং স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের মতো ঘটনা।
বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম শামীম বলেন, “অনেক কর্মী বিদেশে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে সচেতন নন। এর ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। কর্মী পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে, প্রবাসীদের জন্য আইন ও আচরণবিধি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। আমিরাত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার নতুন শ্রমবাজার প্রসারে উদ্যোগ নেওয়া।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার এবং প্রবাসীদের আর্থিক অবস্থা গুরুতর হুমকির মুখে পড়তে পারে। সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমিরাতে শ্রমবাজারের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post