মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তীব্র হওয়ায় হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জেগেছে। ইরান ও ওমানের মধ্যবর্তী এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এবং সমপরিমাণ তরল গ্যাস পরিবাহিত হয়। এ প্রণালির প্রস্থ প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার এবং কেন্দ্রীয় অংশ দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে। ফলে এটি বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহের জন্য একটি কৌশলগত পথ হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তবে তা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলবে জ্বালানি দামের ওপর। সৌদি আরব প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে এই প্রণালি ব্যবহার করে, যা অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া চীন, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোও এই রুটে নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রণালি ব্যবহার করে প্রতিদিন সাত লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, যা তাদের মোট আমদানির ১১ শতাংশ। ইউরোপ তুলনামূলক কম তেল পায় এই রুটে, ফলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দেশগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে ইরান নিজের মিত্রদেরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে, তাই তেহরান এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভেবে দেখবে।
চীনের মতো শক্তিশালী গ্রাহক দেশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে ইরান থেকে তুলনামূল্য কম দামে তেল আমদানি করে থাকে, যা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় ইরানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এ প্রণালি বন্ধ হওয়া ঠেকাতে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিকল্প রুট হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই পাইপলাইন নির্মাণ করেছে, যেগুলো প্রতিদিন প্রায় ৩৫ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহনে সক্ষম। তবে তা হরমুজ প্রণালির সম্পূর্ণ বিকল্প নয়, কারণ এই রুট দিয়ে বর্তমানে যাওয়া তেলের মাত্র ১৫ শতাংশ পরিবহন করা সম্ভব। তাই এই জলপথ বন্ধ হলে এর প্রভাব হবে ব্যাপক, শুধু জ্বালানি বাজারে নয়, বরং ভূরাজনৈতিক অঙ্গনেও।