ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’ ইরানের অভ্যন্তরে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গভীর রাতে শুরু হওয়া এই অভিযানটি ছিল অত্যন্ত সুনিপুণ ও পরিকল্পিত, যার মাধ্যমে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতাদের পাশাপাশি পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়। জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজ এপি’র বরাতে জানিয়েছে, অভিযানে ইসরায়েল উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও গুপ্তচর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল হামলার প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন এবং লক্ষ্যবস্তুদের মৃত্যু নিশ্চিত করাসহ পুরো প্রক্রিয়ায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত ও শুক্রবার ভোরের দিকে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো এই অতর্কিত হামলায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিকল হয়ে পড়ে।
এসোসিয়েটেড প্রেস আরও জানায়, ‘রাইজিং লায়ন’ ছিল বহু বছরের পরিকল্পনার ফসল। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও দেশটির সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মোসাদের এক সাবেক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম রুখতেই এটি ছিল মোসাদের একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এই উদ্দেশ্যে ছোট আকারের ড্রোন চোরাচালানের মাধ্যমে ইরানে পৌঁছানো হয় এবং মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত অক্টোবর মাসে ইরানে চালানো এক বিমান হামলার সময় তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দুর্বলতা শনাক্ত হয়। সেই তথ্যই পরবর্তীতে এই বড় পরিসরের অভিযানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইরানি সামরিক নেতাদের অবস্থান, চলাচলের রুট, এমনকি অবসরকালীন কার্যকলাপ পর্যন্ত ট্র্যাক করা হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে হামলার সময় ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন থাকা গুপ্তচরদের মাধ্যমে পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বিপ্লবী গার্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। মোসাদের সূত্র অনুযায়ী, এই আক্রমণ ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বানচাল করতে ২০০০ সালের পর থেকে গৃহীত নানা প্রচেষ্টার অংশ। স্টাক্সনেট ভাইরাস প্রয়োগ, গোপন নথি চুরি এবং অন্যান্য অতীত অভিজ্ঞতাগুলোর সমন্বয়েই গঠিত হয় ‘রাইজিং লায়ন’ অভিযান।