দেশে আসার পর যাত্রীদের যাওয়ার কথা ছিল হোটেলে। সেখানেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা তাদের। তবে বিমানবন্দরে ফাঁকি দিয়ে যাত্রী চলে গেছেন নিজের বাড়িতে। মঙ্গলবার (১৫ জুন) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটেছে এ ঘটনা। মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আসা কমপক্ষে ৬ যাত্রী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে নিজের বাড়িতে চলে গেছেন।
১১টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রেখে এসব দেশ যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া বেবিচকের ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে মালয়েশিয়া।
তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে এসব দেশে ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী (বসবাসকারী নয়) বাংলাদেশি নাগরিক দেশে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বিদেশে ফ্লাইটে ওঠার আগেই হোটেল বুকিং করতে হবে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আসা ৬ জন যাত্রী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য হোটেল বুক করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ জন একই পরিবারের সদস্য।
বুকিং করা হোটেলের প্রতিনিধিরা বেলা ১২ টা থেকে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত যাত্রীদের রিসিভ করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেন। কিন্তু তাদের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে যাত্রীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে যাত্রীরা হোটেলের প্রতিনিধিদের জানান তারা বাসায় চলে এসেছেন, হোটেলে যাবেন না।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে একজনের নাম আলি আহমেদ, পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। এছাড়া বাকি ৫ জন একই পরিবারের সদস্য। পাসপোর্ট অনুযায়ী তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।
তারা হলেন-জিয়া উস শামস, তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার রিয়া, ছেলে জায়ান খান, কন্যা জিয়ানা জাফরিন খান এবং মা জাকিয়া খান। বেবিচকের নির্দেশনা অনুসারে সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় না। এ যাত্রীরা সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়া থেকে আসার তথ্য গোপন করে বিমানবন্দর থেকে চলে এসেছেন।
হোটেল মেমেন্টো ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার মো. রিপন সরদার জানান, আলি আহমেদ নামের একজন যাত্রী আমাদের হোটেলে রুম বুক করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলে না এসে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে চলে গেছেন।
রাফেলসিয়া সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার রাশেকুল ইসলাম বলেন, জিয়া উস শামস নামের একজন ব্যক্তি আমাদের এখানে বুকিং করেছিলেন। আমাদের লোকজন তাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে চলে গেছেন।
ইতিপূর্বে ওমান থেকেও অনেক যাত্রী দেশে এসে কোয়ারেন্টাইন না করে নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। প্রবাস টাইমের গোপন অনুসন্ধানে দেখাগেছে, উত্তরা ও গুলশানের কিছু হোটেল প্রবাসীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কোয়ারেন্টাইন না করেই হোটেল থেকে রিলিজ দেওয়া হচ্ছে।
আবার উত্তরার কিছু হোটেল ভুয়া করোনা রিপোর্ট ও দিচ্ছে দেশে ফেরা প্রবাসীদের। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ওমান থেকে একজন প্রবাসী দেশে ফেরার পর ৩ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। এরপর করোনা পরিক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তিনি বাড়ি যেতে পারবেন।
আর রিপোর্ট পজিটিভ আসলে তাকে আরো ১১ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু হোটেল প্রবাসীরা দেশে এসে হোটেলে উঠার সাথে সাথেই ভুয়া করোনা রিপোর্ট দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে তাদেরকে রিলিজ দিয়ে দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সরোয়ার আলমের সাথে কথা বললে, তিনি এ ব্যাপারে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (১৫-জুন) প্রবাস টাইমের একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এমনিতেই বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রবাসীরা দেশে এসে ঠিক মতো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন না করলে এতে দেশে করোনা সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়াও দুই একজন প্রবাসীর এমন কর্মকান্ডে পরবর্তীতে সরকার আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post