ত্রিভুজ প্রেমে জীবন দিতে হলো শেরপুরের সুমন মিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রকে। এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন সহপাঠী আন্নিকে গোপনে বিয়ে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসেনি। সাতদিন পর সোমবার (১১ নভেম্বর) মধ্যরাতে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার অর্ধগলিত মরদেহ। অধিকতর তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস পুলিশের।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে শেরপুর পৌরসভার কসবা বারাকপাড়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের কাউনেরচর গ্রামের আজিম উদ্দিনের মেয়ে আন্নির। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এদিকে সুমনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আন্নির প্রথম প্রেমিক রবিন মিয়ার সঙ্গে তার নতুন করে আবার গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
রবিন মিয়া শেরপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও সুমন মিয়ার বন্ধু। শেরপুর শহরের সজবরখিলা মহল্লার ময়মনসিংহে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ফোরকান মিয়ার ছেলে। আন্নির প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর ও ঘনিষ্ঠ হয় রবিনের সঙ্গে। তারা নিজেরা বিয়েরও সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় আন্নির প্রেমিক সুমন মিয়া। পরে পথের কাঁটা সুমনকে সরাতে পরিকল্পনা করে আন্নি ও রবিন।
চাকরির সুবাদে রবিন মিয়ার বাবা ময়মনসিংহে অবস্থান করায় মায়ের সঙ্গেই শেরপুরের সজবরখিলা মহল্লায় নিজ বাসায় থাকে রবিন মিয়া। ৪ নভেম্বর রবিনের মা গ্রামের বাড়ি গেলে বাসা ফাঁকা থাকার সুবাদে আন্নির সঙ্গে পরামর্শ করে সুমনকে বিয়ের কথা বলে রবিনের বাড়িতে ডেকে আনে আন্নি। আন্নির ফোন পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে রবিনের বাড়িতে ছুটে আসে সুমন মিয়া। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কোল্ড ড্রিংক্সের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সুমন মিয়াকে খাওয়ালে তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
এ সময় মাথায় ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে সুমনকে হত্যা করে নিজ বাড়ির উঠানে লাউ গাছের মাচার নিচে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখে তারা। সুমনকে মাটি চাপা দিয়ে আন্নি নিজ বাড়িতে চলে যায় এবং রবিন তার শিক্ষাস্থল ময়মনসিংহ চলে যায়। সুমনের অবস্থান সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে গোলকধাধায় ফেলতে ময়মনসিংহ যাওয়ার সময় সুমনের ব্যবহার করা মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ময়মনসিংহে ফেলে দেয় রবিন। ফলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ সুমনের শেষ অবস্থান ময়মনসিংহ নিশ্চিত করে।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সহায়তায় রোববার সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম শেরপুর সদর থানায় আন্নি বেগম, বাবা আজিম উদ্দিন ও মাসহ আরও কয়েকজনের নামে সুমনকে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। সেইদিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে আন্নি ও তার বাবা আজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে আন্নির দেয়া তথ্যমতে, সোমবার তার দ্বিতীয় প্রেমিক রবিন মিয়াকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রবিনকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার দেয়া তথ্যে, সোমবার গভীর রাতে রবিনের বাড়ির উঠানে লাউয়ের মাচার নিচে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় সুমন মিয়ার অর্ধগলিত মরদেহ।
এ বিষয়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সুমনকে জীবিত উদ্ধার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার যে, সুমন মিয়াকে ওইদিনই তারা হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখে। তবে ত্রিভুজ প্রেমের বলি সুমন হত্যার সঙ্গে সবাইকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post