একটি মুদ্রার শক্তি নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সেটির চাহিদা, সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯৫টি দেশে বর্তমানে ১৮০টি মুদ্রা ব্যবহৃত হচ্ছে।
একটি মুদ্রার শক্তি নির্ভর করে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সেটির চাহিদা, সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর।
মুদ্রাশক্তি বলতে একটি মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। একক পরিমাণ জাতীয় মুদ্রা দিয়ে যত পণ্য ও সেবা কেনা যায় এবং বিনিময়ে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়, তার তুলনা করে এটি হিসাব করা হয়।
মুদ্রা সবসময় জোড়ায় বিনিময় হয়; যেমন, ভারতীয় রুপির বিপরীতে মার্কিন ডলার কেনা। তাই একটি দেশের মুদ্রার মূল্য বিদেশি মুদ্রার সাথে তুলনা করে নির্ধারিত হয়। এটি বিনিময় হার নামে পরিচিত।
এই বিনিময় হারই নির্ধারণ করে, বিদেশি মুদ্রায় পণ্য ও সেবার খরচ কেমন হবে। উদাহরণস্বরূপ, পাউন্ডের বিনিময় হার ডলারের তুলনায় দুর্বল হলে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা পাউন্ড ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
বিশ্বের শক্তিশালী ১০টি মুদ্রা
বেশিরভাগ মানুষ মার্কিন ডলারকে সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা মনে করলেও, কুয়েতি দিনার সেই স্থান দখল করে আছে।
১৯৬০-এর দশকে চালু হওয়া কুয়েতি দিনার বিশ্বজুড়ে তেলের রপ্তানির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার অবস্থান অর্জন করেছে।
২. বাহরাইনি দিনার (বিএইচডি)
বিশ্বের প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক সুবিধা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাহরাইনি দিনার। বাহরাইনি দিনারের মূল্য মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্ধারিত হয়।
৩. ওমানি রিয়াল (ওএমআর)
সরকারি মুদ্রা হিসেবে ভারতীয় রুপি ত্যাগ করার পর, ওমান সরকারি মুদ্রা হিসেবে ওমানি রিয়াল চালু করে। এটি মূলত অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের মতোই, তেল রপ্তানি থেকে শক্তি অর্জন করে।
১৯৭০-এর দশকে চালু হওয়া এই মুদ্রার মূল্য মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্ধারিত হয়।
৪. জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি)
বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে জর্ডানের দিনার।
১৯৫০ সালে এটি প্যালেস্টাইন পাউন্ডের পরিবর্তে চালু করা হয়। এর মূল্য মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্ধারিত।
নির্দিষ্ট বিনিময় হার, বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি এবং গ্যাস ও তেল রপ্তানি সত্ত্বেও ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ঋণের বৃদ্ধি এই মুদ্রাকে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে
শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
৫. জিব্রালটার পাউন্ড (জিআইপি)
১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে এটি সরকারি মুদ্রা হিসেবে চালু করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে জিব্রালটার পাউন্ড পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংয সমমূল্যের এই মুদ্রাটি পর্যটন এবং ই-গেমিং খাতের ওপর নির্ভরশীল।
৬. ব্রিটিশ পাউন্ড (জিবিপি)
বিশ্বব্যাংক ব্রিটেনকে জিডিপি অনুযায়ী ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের অবস্থান এবং ব্রিটেনের লাভজনক বাণিজ্য কার্যক্রমের ফলে ব্রিটিশ পাউন্ড একটি শক্তিশালী অবস্থান লাভ করেছে। এটি বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ভাসমান মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত।
৭. কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের ডলার (কেওয়াইডি)
ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ একটি উপকূলীয় আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
১৯৭০-এর দশকে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের ডলার চালু হয় এবং এটির মূল্য মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্ধারিত।
৮. সুইস ফ্রাঙ্ক (সিএইচএফ)
সুইজারল্যান্ড এবং লিচেনস্টাইনের সরকারি মুদ্রা সুইস ফ্রাঙ্ক বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে।
অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল সুইজারল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
সুইস ফ্রাঙ্ক-এর মূল্য আগে ইউরোর সঙ্গে নির্ধারিত হতো। কিন্তু পরে এটি মুদ্রা বাজারে ভাসমান মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
৯. ইউরো (ইইউআর)
ইউরোজোনের সরকারি মুদ্রা ইউরো বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি সদস্য দেশের মধ্যে ব্যবহৃত হয়। ইউরো বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে।
এটি মুদ্রা বাজারে ভাসমান মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি। এটি মার্কিন ডলারের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সঞ্চিত মুদ্রা এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক লেনদেন হওয়া মুদ্রা।
১০. ইউএস ডলার (ইউএসডি)
ইউএস ডলার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া এবং সবচেয়ে বড় পরিমাণে সঞ্চিত মুদ্রা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ এর অঞ্চল এবং পুয়ের্তো রিকো, জিম্বাবুয়ে, ইকুয়েডরসহ অন্যান্য সার্বভৌম দেশগুলোতে আইনগতভাবে স্বীকৃত।
তেল, সোনা, তামাসহ আরও বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণে ইউএস ডলার বা মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়।
মার্কিন ডলারের আর্থিক শক্তির কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় জিডিপির দেশ হিসেবে পরিচিত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post