গত ২১ মে শুক্রবার মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে কাবাঘরের সামনে খুতবারত অবস্থায় খতিব ও ইমাম শায়খ ড. বানদার বালিলাহর ওপর হামলার চেষ্টা চালায় এক ব্যক্তি। সৌদির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আরব নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, আক্রমণকারী ওই লোক নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করছেন। হারামাইন শরিফাইনের বরাতে আরব নিউজ আরও জানিয়েছে, পরে তাকে সৌদি পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
শুক্রবার (২১ মে) লাইভ চলাকালীন দৃশ্যে দেখা যায়— মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন কাবা শরিফের অন্যতম ইমাম ও খতিব শায়খ বালিলাহ। সে সময় সামনের কাতার থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে ছুটে গিয়ে মিম্বারে উঠে তার ওপর হামলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দারুণ ক্ষিপ্রতায় আক্রমণকারীকে ঝাপটে ধরে ফেলেন এক নিরাপত্তারক্ষী। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের নিয়োজিত অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষীরাও এগিয়ে এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে— বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নিরাপত্তারক্ষীকে হিরো খেতাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানিয়ে তার বেশ প্রশংসাও করা হয়। জানা গেছে, উক্ত নিরাপত্তারক্ষীর নাম মুহাম্মদ আল-জাহরানি। ঘটনা-পরবর্তী তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী নিজেকে ‘আল-মাহদি আল-মুনতাজার’ বা ইমাম মাহদী দাবি করেছে। সৌদির আল-ওয়াতান পত্রিকা অনুসারে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটককৃত ওই ব্যক্তি সৌদি নাগরিক এবং তার বয়স ৪০।
মিম্বারের সামনে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেলেও শায়খ ড. বানদার আবদুল আজিজ বালিলাহ তার খুতবা বন্ধ করেননি। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে তিনি তার খুতবা চালিয়ে যান। তার এমন সাহস ও স্বাভাবিকতাও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর আগে গত মার্চে মসজিদুল হারামের দ্বিতীয় তলায় ছুরি হাতে চরমপন্থী স্লোগান দেওয়া অবস্থায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল মক্কা পুলিশ। হটাৎ করে তাওয়াফকারীদের মাঝে তিনি ছুরি হাতে উশৃঙ্খলতা শুরু করে এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি শুরু করেন। পরে তাকে একটি চেয়ারের আঘাতে কাবু করে নিরাপত্তারক্ষীরা ধরে নিয়ে যায়।
মসজিদুল হারামে ও কাবাঘরের সামনে নিজেকে ইমাম মাহদী ও মাসিহ আল-মুনতাজার দাবি করার ঘটনা বেশ কয়েকটি ঘটেছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে। তখন জুহায়মান আল-ওতাইবি নামক এক ব্যক্তি ও তার শ্যালক মোহাম্মদ আল-কাহতানি, যিনি নিজেকে মাহদী বলে দাবি করেছিলেন। তারা কয়েকশ জিয়ারতকারী ও ওমরাহ পালনার্থীকে জিম্মি করে করে ফেলে। ফলে মসজিদুল হারাম এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ ছিল।
জিম্মিদের উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সৌদি সরকার সন্ত্রাসীদের ওপর পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালিয়েছিল। ফলে কথিত মাসীহ ও কৌশলে মসজিদুল হারামে ঢুকে পড়া তার শত শত অনুসারীর মৃত্যু হয়েছিল। অভিযান শেষে দুর্বৃত্তদের নেতা জুহায়মানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে নিরাপরাধ মানুষ হত্যার দায়ে বিচারের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post