দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে এবং বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পহেলা মে থেকে ওমান সহ ১২ টি দেশ থেকে বাংলাদেশ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পহেলা মে থেকে ওমান, ভারত, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ইরান, মঙ্গোলিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও তিউনিসিয়া থেকে কোনো প্রবাসী দেশে আসতে পারবেন না।
তবে উক্ত দেশ গুলোতে ভ্রমণে অথবা ব্যবসায়িক কাজে যেয়ে আটকা পড়ে আছেন এবং ১৫ দিন অবস্থান যদি না করে থাকেন কেউ, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে তারা দেশে ফিরতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে নিজ খরচে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে আসার আগেই তাদের হোটেল বুকিং করতে হবে। একইসাথে উপরোক্ত ১২ টি দেশে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কেউ যেতে পারবেন না।
অপরদিকে বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, তুরস্ক, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বেলজিয়াম, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরাক, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, পেরু, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও উরুগুয়ে এই ২৬টি দেশ থেকে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে পারবেন। তবে দেশে আসার পর বাহরাইন, কাতার ও কুয়েতের যাত্রীরা ৩ দিন হোটেল কোয়ারেন্টাইন করবে এবং বাকি ২৩ টি দেশের যাত্রীরা ১৪ দিন হোটেল কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।
এদিকে করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় ওমানের নাম প্রকাশ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ওমান প্রবাসীরা। বর্তমানে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত নিম্নমুখী হলেও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় কেন নাম উঠলো এমন প্রশ্ন ওমান প্রবাসীদের। এদিকে গত পহেলা মে রাতে ওমান এয়ার এবং সালাম এয়ারের মাধ্যমে মাস্কাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দুইটি ফ্লাইট আসার কথা থাকলেও দুইটি ফ্লাইটই বাতিল করেছে। যাত্রীরা মাস্কাট এয়ারপোর্টে আসার পর জানতে পারেন তাদের ফ্লাইট বাতিল।
কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ব্যতীত এভাবে ফ্লাইট বাতিল করায় চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রবাসীরা। এদের মধ্যে অনেকেই ১২০০ কিমি দূর সালালাহ থেকে এসেছিলেন। উচ্চমূল্যে টিকিট কেটে এবং করোনা পরীক্ষা সহ দেশে হোটেল বুকিং দিয়েও যখন এয়ারপোর্টে এসে জানতে পারেন তাদের ফ্লাইট বাতিল, তখন এয়ারপোর্টের ভিতরে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রবাসীরা। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে ওমানের নাম বাতিল করতে সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন ওমান প্রবাসীরা।
ওমান থেকে তাইয়েব সিদ্দিকি নামে এক প্রবাসী বলেন, “কেন ওমান প্রবাসীদের সাথে এই অবিচার? বেবিচক চেয়ারম্যান এর প্রতি প্রশ্ন রইল? আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হার কোন দিক থেকেই ওমান ঝুঁকিপূর্ণ নয় তবুও কেন এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, ওমান কে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রাখা হলো, তা আমাদের কাম্য নয়, আশা করি কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিবেচনা করবেন। আমরা প্রিয় মাতৃভূমিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছি,এটা আমরা ওমান প্রবাসীদের একমাত্র দাবি।”
মোঃ মিজান নামে এক ওমান প্রবাসী বলেন, “ওমানে বাংলাদেশ এম্বাসিও আমাদের গুরুত্ব দিতেছে না, মাস্কাট এয়ারপোর্টে ২দিন হয়ে গেল খেজুর খেয়ে রোজা রেখেছি আর কত সহ্য করব? আমাদের কথা শুনার মত কি কেউ নাই!”
ফ্লাইট বাতিল হওয়াতে মাস্কাট এয়ারপোর্টে ২ দিন যাবত অবস্থান করছেন এই প্রবাসীরা
তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসীদের জন্য স্বস্ত্বির খবর হলো- তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকতে হবে না। দেশে এসে নিজ বাড়িতে ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং তদারকি করবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
এক্ষেত্রে দেশে আসার সময় সৌদি আরব প্রবাসীদের করোনা টেষ্ট করে নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে আনতে হবে। দেশে আসার পর বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যদি করোনা আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হবে। একই নিয়ম পালন করতে হবে আবুধাবি, দুবাই, মালয়েশিয়া, লন্ডন, আমেরিকা থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post