ঢাকা বিমানবন্দরে গত বছর ১ কোটি ১৭ লাখ যাত্রীকে সেবা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিমানবন্দর দিয়ে ৯০/৯৫ লাখ যাত্রী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ২৩/২৫ হাজার যাত্রী বছরে চলাচল করছেন। চলতি বছরের শেষে যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, লাগেজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনা, দুইটি গ্রিন চ্যানেল খোলা, ফ্রি টেলিফোন বুথ, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা, নতুন ট্রলি সংযোজন, লাগেজ লেফট বিহাইন্ড সমস্যা উন্নতিকরণ, মশক নিধন এবং শাটল বাস সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রীসেবা অব্যাহত রয়েছে।
এই বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে বছরে প্রায় ৫৫ হাজার ও অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৫৩ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক রুটে বছরে প্রায় ৯৫ লাখ এবং অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। চাহিদা বেশি থাকায় ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। ২০২৩ সালে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত হয়েছে। লাগেজ বহনের সুবিধার্থে বিমানবন্দরে নতুন সংযোজনের পর ট্রলির সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০টিতে দাঁড়িয়েছে। ক্যানোপি থেকে বের হয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তার পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ট্রলিতে করে লাগেজ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে এই বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এসেছে। এস অভিযোগ দূর করতে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে এক ঘণ্টার কম সময়ে যাত্রীদের কাছে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং লাগেজ ডেলিভারি পেতে সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি কর্তৃক তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম আরও বলেন, বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন করে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী (অ্যারাইভাল) এলাকায় দুটি এবং বহির্গমন এলাকায় তিনটি হেল্প ডেস্কে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বেবিচক সূত্র জানায়, যাত্রীদের আকাশপথের যাত্রা আরও নির্ঝঞ্ঝাট করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে এই ট্রলির সংখ্যা বাড়ানো অন্যতম। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায়, বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবগুলো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ৪০টি এয়ারলাইনস এবং অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে যাত্রীদের যাত্রা সহজ করার কাজটি করে যাচ্ছে। পুরনো অনেক চাহিদা এবং সমস্যার কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জবাবদিহির নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন করে নানা উদ্যোগ নেওয়ায় হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার সদস্য কর্তৃক যাত্রীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বিমানবন্দরে কর্মরত ২৮টি ব্যাচের প্রায় ৮০০ সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃক যাত্রীদের লাগেজ রেখে আসা বা লেফট বিহাইন্ড রোধে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে যেসব এয়ারলাইনসের বেশি ‘লেফট বিহাইন্ড’ সেগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আগমনী সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে এনে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় লাগেজ ‘লেফট বিহাইন্ড’ সমস্যায় উন্নতি করা হচ্ছে। এখন লেফট বিহাইন্ডের ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ লাগেজ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে ১০টি ফ্রি টেলিফোন বুথ ও ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আগমনী যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিভিন্ন তথ্যসেবা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি সিমকার্ড না থাকায় যাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। তাই বিভিন্ন অপারেটরের সহায়তায় যাত্রীদের ফ্রি ওয়াই–ফাই ব্যবহার করার ব্যবস্থা হয়েছে।
চলতি বছর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চালু করেছে শাটল বাস সার্ভিস। বিমানবন্দর থেকে কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে আসা- যাওয়া সহজ করতে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে এই উদ্যোগটি চালু করা হয়। নামমাত্র ভাড়ায় এসিযুক্ত বাসে যাত্রীরা তাদের লাগেজসহ চলাচল করতে পারেন।
সৌদি আরব থেকে আসা চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের বাসিন্দা সেলিম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনকার বিমানবন্দরের সেবা আগের চেয়ে ভালো। ল্যাগেজ পাওয়া, মোবাইলে ফ্রি কল করা, এগুলো আমাদের জন্য সহায়ক।
তিনি বলেন, ‘এই সেবাগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে অব্যাহত থাকলে দেড় কোটি প্রবাসী সবাই উপকৃত হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের চাওয়াটাই হলো যেন কোনও ঝামেলা ছাড়াই বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশে আসতে পারি, আবার যেতেও পারি। এর বাইরে আমাদের কোনও চাওয়া নেই। এখন যেভাবে চলছে এভাবে চললে সবাই উপকৃত হবে।
সৌদি আরব থেকে আসা অপর যাত্রী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের মিজানুর রহমান জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। এরই মধ্যে এসেছেনও বেশ কয়েকবার। তবে এবার বিমানবন্দরে লাগেজ কাটা বা বিড়ম্বনার ভয় ছিল না।
তিনি বলেন, ‘সময় মতো লাগেজ পেয়েছি, কোনও সমস্যা হয়নি। বিমানবন্দরকে এ রকমই দেখতে চাই।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post