জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী-পুলিশি যৌথ বর্বরতার প্রতিবাদ ও গণহত্যার বিচার দাবি করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে নাগরিক সংগঠন স্পিক বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনা রেজিম ও তার অনুগত পুলিশ বাহিনী, আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, এবং পুলিশের সহযোগী রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর সদস্যদের গুলিতে অন্তত ১ হাজার ৫৮১ নিরস্ত্র ও নিরীহ ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করে । ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞ চালায় যা অদ্যাবধি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস পুলিশি বর্বরতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পলায়ন ও পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীও সদলবলে গা ঢাকা দেয়, যা পুলিশ ইতিহাসে নজিরবিহীন। এছাড়াও তৎকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী যারা এই ম্যাসাকারে মদদ দিয়েছিল এবং চিহ্নিত খুনিদের অনেকেই দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে। তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
অসংখ্য ঘটনা আমাদের সামনে আসতে দেয়নি স্বৈরাচারী সরকার। যতটুকু সামনে এসেছে তার ভয়াবহতাতেই আমাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। তবে দুঃখের বিষয়, স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি- এই রাক্ষসদের কোনো বিচার তো হচ্ছেই না, উল্টো আন্দোলনকারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। স্বৈরাচারের পারপাস সার্ভ করা পুলিশ বাহিনীর রিফর্মেশন না করে আগের মতো রেখে দেয়া জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের সাথে বেইমানি।
এসময় তারা ৭টি দাবি করেন। দাবিগুলো হলো-
১। অনতিবিলম্বে খুনি পুলিশ সদস্যদের নামসহ তালিকা জনসমক্ষে যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করতে হবে।
২। ছাত্র-জনতার সহায়তায় পুলিশ বর্বরতার আলামত এবং প্রমাণাদি সংগ্রহের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে যেন সে সকল আলামত এবং প্রমাণাদি নষ্টের হীন চক্রান্ত রুখে দেয়া যায়।
৩। খুনি পুলিশদের বিচার কাজ দ্রুত শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যেন জনমনে দ্রুত আস্থা ফিরে আসে এবং ভবিষ্যতে এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।
৪। বাংলাদেশ পুলিশ জুলাই গণহত্যার সাথে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জড়িত। বাংলাদেশ পুলিশকে বাংলাদেশ নাগরিকবৃন্দ ঘাতক মনে করে, কোনোভাবেই আর বন্ধু মনে করে না৷ এই পুলিশ বাহিনী নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রাত্যহিক সেবা দেয়ার জন্য আর উপযুক্ত নেই, মোরালি ব্রেকডাউন করেছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলেছে। সিংহভাগ পুলিশ সদস্য গণহত্যার সাথে জড়িত। তাই পুলিশ বাহিনীকে দ্রুততম সময়ে সংস্কার করে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
৫। আওয়ামী অনুগত যে সব পুলিশ এখনও চাকরিতে বহাল আছে তারা যেন অনলাইন অফলাইনে কোন প্রকার অপপ্রচার ও দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত হতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশের অভ্যন্তরে গোপন মনিটরিং সেল বানিয়ে নজরদারি করতে হবে।
৬। আওয়ামী পুনর্বাসনের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দল হিসেবে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে এবং অপরাধী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৭। অপরাধী যারা বিদেশে পালিয়ে গেল তাদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সহায়তাকারী কারা ছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংগঠনের বিশেষ মুখপাত্র অ্যাড. আলী নাছের খানের সভাপতিত্বে তাজরিয়ান আলম আয়াজের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন স্পিক বাংলাদেশের সংগঠক নাভিদ নওরোজ শাহ, মুহাম্মাদ সজল, অ্যাড. সানাউল্লাহ পাটোয়ারী, অ্যাড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, বুয়েট শিক্ষার্থী নাহিদা আফরোজ লুবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, নাজমুজ্জামান, বুটেক্স শিক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন প্রমুখ। এছাড়া আন্দোলনে পুলিশি বর্বরতার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা বিনতে ইলিয়াস।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post