দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করায় আগামী সোমবার (৫-এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজ বাসভবনে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। মহামারি আকার ধারণ করা করোনায় গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক শনাক্ত ও মৃত্যু ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার পর সরকার এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।
মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গতকাল শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৫৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে।
এরআগে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কয়েকদিন আগে দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। নির্দেশনায় সকল ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত, উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার নির্দেশনা দেয় সরকার।
এছাড়াও মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী বহন না করা, যান চলাচল সীমিত করা, বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করা সহ ১৮ নির্দেশনা জারি করে সরকার।
এছাড়া গত (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী ১১ এপ্রিলের পর আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। করোনা পরিস্থিতি অবনতির কারণে গত ১ এপ্রিল সব নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও দেশে চলমান বইমেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র ও অন্যান্য মেলা বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।
লকডাউনের মধ্যেও শিফটিং ডিউটি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে শিল্পকারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। শনিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীতে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের মধ্যে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। শিল্পকলকারখানাও খোলা থাকবে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ভিন্ন ভিন্ন শিফটিংয়ের মাধ্যমে কলকারখানায় কাজ করতে পারে।
এদিকে কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দিন কিংবা রাতে সবসময় হাসপাতালে লেগেই আছে নতুন রোগীর ভিড়। মধ্যরাতেও সন্দেহভাজন কিংবা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে স্বজন আর পরিবারের সদস্যদের। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার নাজুক অবস্থা তুলে ধরে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
শনিবার (৩ এপ্রিল) ঘড়ির কাঁটা তখন রাত একটা পেরিয়ে গেছে। গভীর রাতের নীরবতা ভেঙে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে রাজধানীর কোভিড নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। ভর্তির অপেক্ষায় নানা বয়সী মানুষ। যদিও রোগী চাপে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে এখন ঠাঁই ৪৩২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী।
পেশায় চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম কয়েক হাসপাতালে গিয়েও পাননি ভর্তির সুযোগ। অবশেষে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মিলল সেই সুযোগ। কোভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা পেতে হচ্ছে অনেককেই। করোনার লক্ষণ বয়ে বেড়ানো ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাটা আরো বেশি। মোহাম্মদপুর থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব শেফালি বেগম ভুগছেন শ্বাসকষ্টসহ কোভিডের নানা উপসর্গে। কয়েক হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন কুর্মিটোলা জেনারেলে কিন্তু সুযোগ মেলেনি এখানেও ভর্তির।
দিন কিংবা রাতের সময়ই রোগী আসার ভিড় থাকলেও কিছুদিন আগেও চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সপ্তাহ দুয়েক আগেও হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন বর্তমানের তুলনায় অর্ধেক রোগী। হাসপাতালের গেটে পাহারায় থাকা আনসার সদস্যরা এমন তথ্য জানান। হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে হলে লাগাম টানতে হবে সংক্রমণের উৎসে এমনটাই মত দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post