অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক আজ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বেঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেক্ষাপট, দেশ সংস্কারের নানা পদক্ষেপ, সরকারের নানা চ্যালেঞ্জ প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্র। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আলোচনায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আগামীর ভাবনা নিয়ে কথার পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলার বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। এতে উঠে আসবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে বসবেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে দুই সরকারপ্রধানের এ বৈঠক হবে। সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে নিউইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না। সেক্ষেত্রে আজকের বৈঠকটি বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। তার সঙ্গে থাকবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে ড. ইউনূস এবং জো বাইডেনের বৈঠক নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ এবং তাদের বর্তমান কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অবহিত করা হবে বলে ধারণা করি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানানো হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবর্তনের জন্য গৃহীত উদ্যোগের বিষয়ে কথা হবে। এছাড়া এ প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সহযোগিতার সুযোগ থকলে তা নিশ্চিতের অনুরোধ জানানো হবে।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েনের বিষয়ে মর্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, নাম ধরে আলোচনা নাও হতে পারে। এমন বলা হতে পারে, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। বাংলাদেশের মৌলিক নীতিমালা অনুসারে গণতান্ত্রিক সরকার- নিরপেক্ষ, উদারনৈতিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে চায়। এ পথে কেউ যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হবে। তাহলেই বোঝা যাবে কী বলা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী বলতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র খুশি এরকম বক্তব্য আসতেই পারে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি মানবিক, ন্যায্য বাংলাদেশের দেখতে চান বলতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল, আগামী দিনেও থাকবে এমন বক্তব্য আসতে পারে। ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতেই পারেন ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আগামী দিনেও তারা কাজ করুক, সেটি আমরা চাই।
কূটনৈতিক নানা সূত্র বলছে, এ বৈঠকে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বিনিয়োগ, তাদের বিভিন্ন সংস্থা এবং কোম্পানির কাছে থাকা ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধিসহ আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসতে পারে।
ড. ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post