পুলিশের সহায়তায় ২২ বছর পর বাবা মনোয়ার হোসেনকে পেলেন ছেলে আশিকুর রহমান। তবে জীবিত নয়; মৃত্যুর পর বাবার সন্ধান পান তিনি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় মনোয়ার হোসেন (৬৫) নামে এক ভিক্ষুকের লাশ উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ। তার পোটলায় পাওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বাবার খোঁজ পান ছেলে আশিকুর রহমান।
নিহত মনোয়ার হোসেন রাজবাড়ীর লক্ষীকোল এলাকার মৃত নুর বক্সের ছেলে।
জানা যায়, ২২ বছর আগে মনোয়ার হোসেন তার বাড়ি থেকে বের হয়ে বরিশালে চলে যান। সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেই ঘরে স্ত্রী, ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সঙ্গে গত ২২ বছর মনোয়ারের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
পুলিশের ধারণা, বরিশাল থেকে সে কিছুদিন আগে দৌলতদিয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় এসে ভিক্ষাবৃত্তির কাজ করছিলেন। বয়স বেশি হওয়াতে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যেতে পারেন।
পুলিশ বলছে, সোমবার সকালের দিকে স্থানীয়রা বাস টার্মিনালের পাশে একটি লাশটি দেখতে পেয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে খবর দেন। লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে লাশের পাশে থাকা একটি পোটলায় পরিবারের অসংখ্য মোবাইল ফোন নম্বর দেখতে পায়। সেখান থেকে একজনকে ফোন দিলে ফোনটি প্রথমপক্ষের ছেলে রাজবাড়ীর লক্ষীকোল এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান রিসিভ করেন। পরে আশিক তার বাবার লাশ হতে পারে ভেবে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় এসে তাকে শনাক্ত করেন।
ছেলে মো. আশিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বয়স যখন ৪ বছর তখন আমার মা, আমাকে ও বোনকে রেখে বাবা বাড়ি থেকে চলে যান। পরে বড় হয়ে জানতে পেরেছি বাবা নাকি বরিশালে আরেকটি বিয়ে করেছেন। সেখানেও তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছেন। তখন থেকে আমার বাবার প্রতি অনেক ঘৃণা জন্মাতে থাকে। সেই কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনোদিন আর আমার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করিনি। গত কুরবানির ঈদের ২০ দিন আগে হঠাৎ করে একদিন বাবা আমাদের রাজবাড়ীর লক্ষীকোল এলাকার বাড়িতে আসেন। সেখানে এসে ১৫ দিন আমাদের বাড়িতে থেকে হঠাৎ না বলে কোথায় যেন চলে যান। সেই থেকে আর বাবার সঙ্গে আমাদের পরিবারের কারো কোনো যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ সোমবার সকালের দিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমার বাবার লাশ পাওয়া গেছে। তবে বাবাকে পেলাম ঠিকই কিন্তু জীবিত না। লাশ হয়ে তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এলেন বলে কাঁদতে থাকেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় লোক মারফত খবর পাই গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার বাস টার্মিনালে একটি বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ পাঠিয়ে লাশটি থানায় নিয়ে আসি। লাশের কাছে থাকা একটি পোটলার মধ্যে কাগজে লাশের পরিবারের লোকদের অসংখ্য মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। তখন ফোন দিলে তার ছেলে ফোনটি ধরেন। তিনি থানায় এসে তার বাবার লাশটি শনাক্ত করেন। লাশটি ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post