দাস প্রথা (কাফালা পদ্ধতি) থেকে বেরিয়ে এবার সংশোধিত নতুন শ্রম আইন জারী করেছে সৌদি আরব। এতে বিতর্কিত কাফালা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরপরও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, এর মাধ্যমে কতটা লাভ হবে এবং এর সুবিধা কি সব প্রবাসী কর্মীই পাবেন?
জানা গেছে, সৌদির কাফালা ব্যবস্থায় আনা সংস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এখন থেকে দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে এবং বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে নিয়োগকর্তাকে সরাসরি লিখিতভাবে বা ইমেইলে জানালেই চলবে, পূর্বানুমতির দরকার পড়বে না। এখন থেকে মেয়াদ শেষ হলে কর্মীরা চাকরি ছেড়েও দিতে পারবেন। এটি শুধু অনলাইনে জানালেই হবে। আর কোনো অনুমতি লাগবে না।
এ বিষয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আগে প্রবাসী কর্মীরা কাজ পরিবর্তন করতে, এমনকি মেয়াদ শেষে চাইলেও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে পারতেন না। এর জন্য নিয়োগকর্তার অনুমতি লাগত। এখন আর সেটা লাগবে না।
তবে এই সুবিধা পেতে কোনও প্রতিষ্ঠানে অন্তত এক বছর কাজ করতে হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এক বছর পরে চাইলে প্রবাসী কর্মীরা চাকরি পরিবর্তন এবং ছুটির সময় নিজের দেশসহ যেকোনো স্থানে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বৈধ নিয়োগপত্র থাকতে হবে। নাহলে প্রবাস জীবনে জটিলতার অবসান ঘটবে না।
কাফালার নতুন নিয়মে বাংলাদেশের গৃহকর্মী বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারা গেছেন, তারা এসব সুবিধা পাবেন কিনা জানতে চাইলে দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈধ নিয়োগপত্র থাকলে সবাই সুবিধা পাবেন।
দূতাবাসের কর্মকর্তা আরো বলেন, আইনটির প্রয়োগ মাত্র শুরু হলো। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হবে। এখন থেকে ভিসা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসবে। সিঙ্গেল এন্ট্রির পরিবর্তে প্রবাসী কর্মীদের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হবে।
আরো পড়ুনঃ
ভালো কাজের এই প্রতিদান!
ওমান রুটে বিমানের এ কি হাল!
পাসপোর্ট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ওমান প্রবাসীরা
ফেসবুক প্রতারণা থেকে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান
তবে প্রতারকরা সৌদির নতুন নিয়মের সুযোগ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আমাদের দেশের প্রতারকরা এই আইনের সুযোগ নিতে পারে। তারা ফ্রি ভিসার কথা বলে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর প্রতারণা করতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কিন্তু জনশক্তি রফতানিকারক ও বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের মতে, গৃহকর্মীরা সরাসরি এই সুযোগ পাবেন না। কারণ, তারা কাজে নিযুক্ত হন কোনও একটি এজেন্সির মাধ্যমে। একারণে যদি ওই এজেন্সি যদি মনে করে, কোনও কারণে গৃহকর্মীর চাকরি পরিবর্তন করাবে, তাহলে তারা করে দিতে পারে।
যেসব প্রবাসী গাড়িচালক ব্যক্তিগত গাড়ি চালান, তারাও এই সুবিধা পাবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া, সৌদিতে চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক। সেখানে নির্ধারিত অঞ্চলের বাইরে চাকরি পরিবর্তন করে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সৌদি আরব নিজেদের স্বার্থেই শ্রম আইনে পরিবর্তন এনেছে। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকের স্বল্পতা এবং বাইরে থেকে শ্রমিক আমদানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে সেখানে অবস্থানরত কর্মী, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এখন চাইলে চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন।
বেশি বেতনে আরেক জায়গায় কাজ নিতে পারবেন। আগে তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হতো। তারা চাকরি পরিবর্তন তো দূরের কথা, চাইলে দেশেও ফিরতে পারতেন না। এমনকি কেউ মারা গেলেও অনুমতি না মিললে দেশে মরদেহ পাঠানো যেত না।
সৌদি আরবে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে বৈধ বাংলাদেশি কর্মী প্রায় ২০ লাখ। সেখানে তিন লাখ বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post