প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার। এ রেকর্ড অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্সে একের পর এক রেকর্ড গড়লেও এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নানা হয়রানী আর ভোগান্তির যেন শেষ নেই!
বর্তমান সরকার প্রবাস বান্ধব হলেও সরকারের কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এমন দাবী প্রবাসীদের। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দূতাবাসের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের অভিযোগ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার! তবে ইদানীং সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে ওমানে পাসপোর্ট যেন সোনার হরিণ। নবায়নের জন্য আবেদন করে এক বছরেও মিলছে না নতুন পাসপোর্ট। এমতাবস্থায় অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন অনেক প্রবাসী। পাসপোর্ট ভোগান্তিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওমান প্রবাসীরা।
প্রবাসী বাংলাদেশির অভিযোগ, দূতাবাস নির্ধারিত এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন করে ৫/৬ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছেনা। আবার অনেকে সরাসরি দূতাবাসে এসে আবেদন করেও যথাসময়ে পাচ্ছেননা পাসপোর্ট।
এরমধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও দূতাবাস কোনো তদারকি করছেনা। এ ব্যাপারে দূতাবাসে সেবার পরিবর্তে সেখানে চলছে নানা অনিয়ম এবং হয়রানি, এমন অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক ওমান প্রবাসী।
এদিকে ওমান প্রবাসীদের দাবি, দূতাবাসের অনিয়ম নিয়ে কথা বললে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়, যে কারণে দূতাবাসের অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান তারা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এমন এক ওমান প্রবাসী কমিউনিটি নেতা বলেন, “আমি দূতাবাসের কিছু অন্যায় এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তারা আমাকে ওমান সিআইডি দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেছে, এমনকি তারা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে, বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।”
সম্প্রতি দূতাবাসের রোষানলে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফেরত এসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রামের আরেক প্রবাসী সলিম উল্লাহ। দূতাবাসের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে স্বপরিবারে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সলিম উল্লাহ’র।
প্রবাসীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট বুঝলেও দূতাবাসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের কোনো কথাই শুনতে চান না সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা, তাদের আচরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকই।
আরো পড়ুনঃ
কৃত্রিম চাঁদ বানাচ্ছে সৌদি আরব
সহজে ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে
ইমো-হোয়াটসঅ্যাপের ভয়ঙ্কর ফাঁদে প্রবাসীরা
জনসনের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন এক ডোজই যথেষ্ট
করোনার সর্বশেষ তথ্য নিয়ে ওমান সুপ্রিম কমিটির সংবাদ সম্মেলন
নাসির উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগী মুঠোফোনে প্রবাস টাইমকে জানান, তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর ওমানে ছিলেন, দেশটির বুরাইমি অঞ্চলে তার ৬টা দোকান ছিলো, পরিবার নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই ছিলেন। কিন্তু দূতাবাসের পাসপোর্টের অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় কাল হয়ে দ্বারায় তার জীবনে। কোনো ধরণের নোটিশ ছাড়াই তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান নাসির উদ্দিন।
খোজনিয়ে জানাগেছে অনেক দূর থেকে দূতাবাসের সেবা নিতে এসেও নানা কারণ দেখিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়, কাগজপত্র ঠিক নাই এমন ওজুহাতে হয়রানি করা হয়, তবে দালালদের মাধ্যমে গেলে দ্রুত কাজ হয় বলে জানিয়েছেন অনেক প্রবাসী।
এ ব্যাপারে দূতাবাসের পাসপোর্ট অফিসার আবু সাইদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন। প্রবাস টাইমের পক্ষথেকে রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমানের কাছে এ বিষয় গুলো জানতে চাইলে তিনিও কোনো সাড়া দেননি। দূতাবাসের এমন কার্যক্রমে হতাশ খোদ ওমানিরাও। প্রবাসীদের দাবী, সরকারের পক্ষথেকে দূতাবাসের এইসব হয়রানি বন্ধ করা না গেলে, অচিরেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ওমানের শ্রম বাজারের উপর।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post