বাংলাদেশ বর্তমানে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। প্রতিবেশী ভারত থেকে আসা ঢল ও দেশের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭টি প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে উঠে গিয়েছে এবং ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ৩০টি পয়েন্ট ভেঙে পড়েছে।
গত ১২ দিন ধরে এই বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় প্রায় ৮০টি গ্রাম পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর হারিয়ে, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে। ফসলি জমি, পশুহাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
ফেনীর পাঁচটি উপজেলায় ভারতীয় পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় প্রায় তিন লাখ মানুষের জীবন যাতনায় পড়েছে। সম্পত্তি লোকসানের চেয়ে এখন প্রাণ বাঁচানোই তাদের কাছে প্রধান চিন্তা।
দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি এবং ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দিয়েছেন। তবে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং পানির প্রবল স্রোত উদ্ধার কাজে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করছে। অঞ্চলটিতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আঞ্চলিক সড়কগুলি পুরোপুরি পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে গোমতী, মনু, কুশিয়ারা এবং খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, বসতবাড়ি ও কৃষি জমি ডুবে গেছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র খুলে এবং বাঁধ মেরামতের কাজ করে জনগণকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
নোয়াখালী জেলায় অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে, ফলে স্থানীয় জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যাকবলিত হওয়ায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তাদের সকল কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে। বুধবার (২১ আগস্ট) পাউবোর এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। কর্মচারীদের তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় সেখানে ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্টের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতীর জেলা প্রশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তার সরকারি এক্স একাউন্টে এই তথ্য জানিয়েছেন। বন্যায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post