ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার প্রশান্ত মালাকার। শুক্রবার (১৯ জুলাই) অফিস না থাকায় রাজধানীর ভাটারায় নিজের বাসাতেই ছিলেন তিনি। এ সময় ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার যেতে দেখে ছাদে গিয়ে হাত নেড়েছিলেন ২২ বছরের এ যুবক।
এর কিছুক্ষণ পরেই বাসার ছাদে এসে তাকে ধরে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। বুধবার (৩১ জুলাই) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ছেলেকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা দেন বাবা সুশান্ত মালাকার।
তিনি বলেন, ‘গ্রামে বড় হয়েছে আমার ছেলে, জীবনে কোনোদিন হেলিকপ্টার দেখেনি। তাই হয়তো বাড়ির ছাদে উঠে হাত নেড়েছে। এ জন্য তারে ধরে নিয়ে যেতে হবে? আমরা কৃষিকাজ করি। পরিবারের কেউ কোনোদিন কোর্ট কাচারিতে যাইনি। এই প্রথম আমার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। কী করে তাকে মুক্ত করব, এত টাকা কোথায় পাব, কিছুই জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে প্রশান্ত মেঝো। সহজ সরল ছেলে আমার, অনেক কষ্ট করে ইন্টার পাশ করিয়েছি। এ মাসেই ৬ হাজার টাকা বেতনে ঢাকায় একটা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়।
ওকে পুলিশে ধরার একটু আগেও আমার সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে বেতন পেলেই বাড়ি যাবে, জমিতেও আমার সঙ্গে কিছুদিন কাজ করে আসবে। এরপরই আমার ফুট্টুসকে (প্রশান্ত) পুলিশে নিয়ে যায়।’
তার রুমমেটরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতো প্রশান্ত। কিছুদিন পর ফসল ওঠনোর সময় বাবাকে সাহায্য করতে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এখন বিনা অপরাধে প্রশান্ত জেল খাটছেন।
এর আগে গত ২২ জুলাই বারিধারা উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরসহ বিস্ফোরক আইনের মামলায় পুলিশ প্রশান্তকে আদালতে হাজির করে। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও প্রশান্তর জামিন নাকচ করেন আদালত।
এ ব্যাপারে প্রশান্তের আইনজীবী রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা আদালতে আর্টিকেল ৩৬ এর কথা বলেছি, যেখানে প্রত্যকে নাগরিকের বাংলাদেশের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নিজের বাসার ছাদে হেলিকপ্টার দেখে হাত নাড়ার কারণে তাকে আটক করে তার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post