ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটির (ডিআইআইটি) নিখোঁজ শিক্ষার্থী মাসরুরের সন্ধান চাইতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল তার পরিবার। তবে, সংবাদ সম্মেলনের আগেই মাসরুর বাবা ও ভাইকে তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহাগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মাসরুর বাবা ও ভাই সেগুনবাগিচার ডিআরইউতে আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলার কথা বলে গলিতে রাখা সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
নিখোঁজ মাসরুর হাসানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ডিআইআইটির শিক্ষার্থী মাসরুরের সন্ধান চেয়ে আজ বিকেল ৩টায় ডিআরইউয়ের সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকার কথা ছিল।
সরেজমিনে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যে জানা যায়, মাসরুরের বড় ভাই মেহেদী হাসান ও তার বাবা আবুল হাসেম রিকশাযোগে ডিআরইউতে আসেন। তারা রিকশায় চড়ে ঠিক ৩টায় এসে ডিআরইউয়ের সামনে নামা মাত্র কয়েকজন ডিবি পুলিশ সদস্য তাদের ধরে গলিতে নিয়ে যান। এরপর সাদা মাইক্রোবাসে তুলে সেগুনবাগিচা এলাকা ত্যাগ করেন।
জানতে চাইলে ডিবি লালবাগ বিভাগের এডিসি খন্দকার আরাফাত লেলিন বলেন, ডিআইআইটি শিক্ষার্থী মাসরুরের ভাই মেহেদি হাসানকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কোন অভিযোগে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি ডিবি লালবাগের ডিসি মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে ডিবি লালবাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, কোটা আন্দোলনের নাম করে পুলিশ সদস্য ও ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মাসরুর ও মুয়াজ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনকেই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে, মাসরুরের বড় ভাই মেহেদী হাসান ও তার বাবা আবুল হাসেমকে আটকের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি।
ডিবির হাতে আটক হওয়ার আগে মাসরুরের ভাই ও বাবা একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গত ২৫ জুলাই ডেমরা বড়ভাঙ্গায় ফজর নামাজের পর নিকটাত্মীয়ের বাসার নিচ থেকে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে মাসরুরকে নিয়ে যান। পরে পুলিশের কিছু সদস্য আত্মীয়ের (মাসরুরের মামা) বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন। মাসরুরকে কেন তারা বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন এই অভিযোগে মামা, মামার দুই শিশু-কিশোর সন্তান এবং ভাতিজাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডেমরা থানায় নিয়ে যান তারা।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, মাসরুরকে তারা পাননি, যদি তাকে হাজির না করা হয় তাহলে না কি আটকদের লাশ বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর মাসরুরের মামা, তার সন্তান এবং ভাতিজাকে সিএমএম আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে সাজানো মামলায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, মাসরুরের কোন খোঁজ থানায় পাওয়া যায় না।
আজ পাঁচদিন যাবৎ তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আশপাশের সব থানায় যোগাযোগ করেও তার ব্যাপারে কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। সে কোথায় কী অবস্থায় আছে, পরিবারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রশাসনের একটি অসমর্থিত সূত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, তাকে সম্ভবত ডিবি অফিসে কিংবা র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে, যা আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি। এমতাবস্থায় আমরা তার জীবন নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত, আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে মাসরুরের সন্ধান দাবি করছি।
প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ, দয়া করে আমাদের মাসরুরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পাশাপাশি মাসরুরের মামা ও তার পরিবারের সদস্যদের জামিনে মুক্তি এবং আরোপিত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post