ভারতের হায়দরাবাদের নারী রাজস্ব কর্মকর্তা এম অনুসূয়া সরকারি চাকরিতে তার নাম ও লিঙ্গপরিচয় পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তার সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে এখন থেকে তিনি পরিচিত হবেন ‘এম অনুকাথির সূর্য’ নামে। সরকারি নথিতে তার লিঙ্গপরিচয় হবে—পুরুষ।
তেলাঙ্গানার হায়দরাবাদে সেন্ট্রাল এক্সাইজ কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স অ্যাপ্লিলেট ট্রাইবুনালের চিফ কমিশনারের অফিসে জয়েন্ট কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন ওই আইআরএস (ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস) অফিসার।
তিনি নিজের লিঙ্গ এবং নাম পালটানোর আর্জি জানান। মঙ্গলবার সেই আর্জি মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এবার থেকে যাবতীয় সরকারি নথিতে তার নাম পালটে যাবে। পালটে যাবে তার লিঙ্গও। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভারতের সিভিল সার্ভিসেস ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার এরকম ঘটনা ঘটল।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে হায়দরাবাদে সেন্ট্রাল এক্সাইজ কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স অ্যাপ্লিলেট ট্রাইবুনালের চিফ কমিশনারের অফিসে জয়েন্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত আছেন মিস এম অনুসূয়া।
তিনি নিজের নাম পালটে মিস এম অনুসূয়া থেকে মিস্টার এম অনুকাথির সূর্য করার আর্জি জানান। একইভাবে লিঙ্গ পালটে নারী থেকে পুরুষ করার আর্জি জানান। তার আর্জি গৃহীত হয়েছে। তাই সমস্ত সরকারি রেকর্ডে ওই অফিসারকে এবার থেকে মিস্টার এম অনুকাথির সূর্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
ওই সিনিয়র অফিসারের লিঙ্কডইনের প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০১০ সালে চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইআরএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। প্রথমে চেন্নাইয়ে অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
২০১৮ সালের এপ্রিলে ডেপুটি কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি হয়েছিল। পোস্টিং ছিল চেন্নাইয়ে। তারপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি জয়েন্ট কমিশনার হিসেবে হায়দারাবাদে কাজ শুরু করেন।
মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয়ের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হায়দরাবাদ বেশকিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের জুনে হায়দরাবাদের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব লিগাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিভার্সিটির আইনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন, স্নাতক সনদে শিক্ষার্থীর লিঙ্গপরিচয় রাখা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এই আবেদন মঞ্জুর করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতে লৈঙ্গিক বিভাজন দূর করার পথে এটা এক ধাপ অগ্রগতি। গত বছর হায়দরাবাদের ইএসআই হাসপাতালে জরুরি মেডিসিন প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা শুরু করেন ট্রান্সজেন্ডার চিকিৎসক রুথ পল জন। ভারতে এই কোর্সে পড়াশোনা শুরু করা প্রথম চিকিৎসক তিনি।
এ ছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক চালু করে তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার। সেখানকার চিকিৎসকদের সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য ‘ট্রান্সজেন্ডার নীতি’ ঘোষণা করে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post