কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডিবি পরিচয়ে মাদক মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে এক প্রবাসীর থেকে ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক এএসআইসহ সাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভৈরব উপজেলার কমলপুর এলাকার বাসিন্দা ও সাইপ্রাস প্রবাসী বাচ্চু তালুকদার। অভিযোগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আজ শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
লিখিত অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন অষ্টগ্রাম থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোসাব্বির হোসেন (৩৭), ভৈরবের এক গ্যারেজ মালিক সালা উদ্দিন (৩৫) ও আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক শফিক মিয়া (৩০)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভৈরবের কমলপুর এলাকার বাসিন্দা ও সাইপ্রাসপ্রবাসী বাচ্চু তালুকদার এবং ভৈরবের চণ্ডিবের এলাকার সালা উদ্দিন পূর্বপরিচিত। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে সালা উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ ও মাঝেমধ্যে তাঁর গ্যারেজে যান বাচ্চু। ওই সময়ে এএসআই মোসাব্বিরের সঙ্গে পরিচয় হয় বাচ্চুর।
গত ৩০ মে বিকেলে সালা উদ্দিন ফোন করে তাঁর গ্যারেজ যেতে বলেন। বাচ্চু গ্যারেজে গিয়ে দেখেন মোসাব্বির এক নারীকে নিয়ে আগে থেকেই সেখানে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর মোসাব্বির ও সালা উদ্দিন মিলে শফিক মিয়ার আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যান বাচ্চুকে।
সেখানে যাওয়ার পর অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি ডিবি পরিচয় দিয়ে মোসাব্বিরের থেকে হাতকড়া নিয়ে বাচ্চুর হাতে পরিয়ে দেন। পরে ইয়াবা সেবন এবং সেখানে থাকা নারীর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে জিম্মি করে টাকা দাবি করা হয়।
টাকা দিতে না পারলে বাচ্চুকে চালান দিয়ে দিবে বলে হুমকিও দেন তাঁরা। পরে বাচ্চু তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা দিলে রাত ১১টার দিকে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর বাচ্চু জানতে পারে ওই নারী মোসাব্বিরের স্ত্রী। পরে ভৈরব থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে এসআই সাইদুর রহমান অষ্টগ্রাম থানার এএসআই মোসাব্বিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাচ্চুকে ২৫ হাজার টাকা এনে দেন। বাকি টাকার দাবি জানালে মোসাব্বির মামলার ভয়ভীতি দেখান প্রবাসী বাচ্চু তালুকদারকে।
ভুক্তভোগী বাচ্চু তালুকদার বলেন, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। টাকা না দিলে আমাকে মামলা দিয়ে চালান দিয়ে দিবে, ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা চাইলে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেয়।
অভিযুক্ত এএসআই মোসাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে ছিলাম না। আমাকে জড়ানো হইছে। আমি অসুস্থ। এখন কিছুই বলতে পারব না। এ বিষয়ে জানতে সালা উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ওই এএসআই মোসাব্বির হোসেনকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post