ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর বাসিন্দাদের আবারও বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তবে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকা লোকজনকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
এমনকি রাস্তায় পড়ে থাকা মরদেহও উদ্ধার করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। গত বুধবার (১০ জুলাই) গাজায় হামলা জোরদার করায় আবারও বাসিন্দাদের গাজা শহর ফাঁকা করে দেয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল।
এমনকি কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির জন্য দোহায় ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার মধ্যেই এই হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
একজন ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানান, তিনি ইয়ারমুক স্টেডিয়ামের কাছে বসেছিলেন। তখন তিনি দেখেন একজন ইসরায়েলি স্নাইপার খাবার নিয়ে সাইকেলে করে যাওয়া এক ব্যক্তিকে গুলি করছেন। স্নাইপার ব্যক্তিটিকে সরাসরি গুলি করেন।
একজন নারী আল-জাজিরাকে জানান, তিনি ইয়ারমুক স্টেডিয়ামের মধ্য দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল যে রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের মরদেহ পড়ে রয়েছে। যাদেরকে ইসরায়েলি স্নাইপাররা গুলি করে হত্যা করেছে।
ওই নারী বলেন, ‘আমরা মরদেহগুলো সরিয়ে নিতে প্যারামেডিক এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সহায়তা চাই। তাহলে অন্তত মরদেহগুলো রাস্তায় পড়ে থাকবে না। কারণ, মরদেহগুলো রাস্তা থেকে সরানো না হলে সেগুলো কুকুরে খাবে। মরদেহগুলো দাফন করা উচিত।’
তবে ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, মরদেহগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারেননি প্যারামেডিকরা। তিনি বলেন, মরদেহগুলো উদ্ধারে তারা (প্যারামেডিক) কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান। কেউ মরদেহগুলোর দিকে এগোলেই সরাসরি গুলি করা হচ্ছে।
কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইসরায়েলি স্নাইপাররা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন। পরে কয়েকজন মরদেহটি উদ্ধার করতে সমর্থ হন। একজন বাসিন্দা বলেন, ‘ওই লোক শান্তভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার মাথায় একটি গুলি লাগে। পরে আমরা এগিয়ে গিয়ে মরদেহটি নিয়ে আসি।’
এদিকে উত্তর গাজার শুজাইয়া জেলায় ইসরায়েলি বাহিনীর দুই সপ্তাহ ধরে হামলার পর বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা অন্তত ৬০টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বুধবার রাতে ইসরায়েল ঘোষণা দেয় তারা সেখানে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শেষ করেছে। এরপর নিখোঁজ বাসিন্দাদের পরিবার এবং সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি কর্মীরা তাদের অনুসন্ধানে নামে।
এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ‘শুজাইয়ার ৮৫ শতাংশ ভবন এখন বসবাসের অযোগ্য এবং শুজাইয়া এখন একটি ‘ডিজাস্টার জোনে’ পরিণত হয়েছে। এখানকার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।’
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৩৮ হাজার ৩৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৮ হাজার ২৯৫ জন।
দ্বিচারিতা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান পেদ্রোর
বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার চলমান সংঘাত নিয়ে দ্বিচারিতা প্রত্যাখ্যান করতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে অন্য নেতাদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে পেদ্রো বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের জনগণকে বলি, আমরা এ কারণেই ইউক্রেনকে সমর্থন করছি যে আমরা আন্তর্জাতিক আইন সুরক্ষা করছি। তাহলে ঠিক এই একই কাজটি আমাদের গাজার ক্ষেত্রেও করতে হবে।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রাজনৈতিক অবস্থান থাকা উচিত, যেখানে আমাদের দ্বিচারিতা থাকবে না।’ অবিলম্বে এবং জরুরি ভিত্তিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিবেশ তৈরি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post