মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ওমানে দীর্ঘদিন ধরেই স্থগিত হয়েছিল শ্রমিক পাঠানো। তাছাড়া হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকও অনিশ্চিত অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। তবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ ও তদরকির কারণে ধীরে ধীরে কাটছে জটিলতা।
ওমান সরকার এবার চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্স, শিক্ষকসহ ১২ ক্যাটাগরিতে তাদের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে। একইসঙ্গে দেশটিতে যে অবৈধ ৯৬ হাজার বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে, তাদেরও বৈধতা দেবে দেশটির সরকার। এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার বিন আবদুল করিম আল-বালুশী বৈঠক হয়। এসময় দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার আশ্বাসও দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনসহ অন্যান্যরা।
বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ওমানে অবৈধ ৯৬ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসীকে বৈধ করবে দেশটির সরকার। শুধু তাই নয়, অবৈধ অভিবাসীদের জরিমানা মওকুফের বিষয়েও ভাবছে ওমান। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছিল। সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। ওমান সরকার বাংলাদেশির জন্য শ্রমবাজার আবারও উন্মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছে।”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন ওমানে দক্ষ জনবল ভিসা পেলেও অদক্ষ জনবল নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। ওমানকে একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ডেডিকেটেড করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ চায় সেখানে একটি টিটিসিতে ওমানের চাহিদা মতো কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে।”
বৈঠকে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাসহ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্রুত একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। ওমানে দক্ষ জনবল প্রেরণের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
কিছুদিন আগে ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার বিন আবদুল করিম আল বুলুশি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ওমানের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদান রয়েছে। উভয় অর্থনীতিই এই শ্রমশক্তির দ্বারা উপকৃত হচ্ছে।”
বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আল বুলুশি বলেন, “প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি জনশক্তি তাদের শ্রমবাজারে কাজ করছে। আমরা শ্রমের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যায়ক্রমে শ্রমবাজার পর্যালোচনা করি। সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতে, কখনো কখনো এমন দেশগুলোতে স্থগিতাদেশ দিয়ে থাকি যেখানে অতিরিক্ত সংখ্যক জনশক্তি রয়েছে। বাংলাদেশিদের জন্য ১০টি ক্যাটাগরির ওমানের ভিসা এখন উন্মুক্ত।”
গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধের ঘোষণা দেয় ওমান সরকার। রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সব শ্রেণির বাংলাদেশি নাগরিকদের নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিত কার্যকর হবে। ওমানে ট্যুরিস্ট ও ভিজিট ভিসায় আসা প্রবাসীদের ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগও একই সঙ্গে স্থগিত থাকবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post