বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দপ্তরের উপপরিচালক (ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন) রাশিদা সুলতানা কর্মক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না।
চলেন নিজের খেয়ালখুশিমতো। তিনি ফাইল আটকে ঘুষ নেন। এমনকি ‘ঘুষ’ হিসেবে আম, লিচু, চালও চান। রাশিদার বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেবিচকের তদন্তে উঠে এসেছে।
গত বছরের জুনে বেবিচকের তদন্ত কমিটি রাশিদার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে তাঁকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করে। কিন্তু তাঁকে কোথাও বদলি করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বেবিচকের এক শীর্ষ কর্মকর্তার হাত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এরপর রাশিদা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে বেবিচক সূত্র জানায়।
সম্প্রতি রাশিদার বিরুদ্ধে নতুন করে পাঁচটি ‘গুরুতর’ অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে ১২ জুন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বেবিচক।
এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বেবিচকের সদস্য (এটিএম) এয়ার কমডোর এ কে এম জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’
বেবিচকের গত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাশিদা এখতিয়ার-বহির্ভূতভাবে দাপ্তরিক গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। বেবিচকের আদেশ অমান্য করে তিনি রাজধানীর কাওলা এলাকার সংস্থার দুটি বাসা একাই দখল করে রেখেছেন।
রাশিদা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও সহকারী পরিচালক (এটিএম) সুপ্লব কুমার ঘোষকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকি দিয়েছেন। তাঁকে চাপ দিয়ে আম, লিচু, চালসহ নানা কিছু চেয়ে নিয়েছেন।
সুপ্লব গত জানুয়ারিতে রাশিদার বিরুদ্ধে নতুন করে বেবিচক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। এটিসহ পাঁচটি অভিযোগে এখন রাশিদার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
রাশিদার বিরুদ্ধে একটি গোয়েন্দা সংস্থাও প্রতিবেদন দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দেননি রাশিদা।
এ বিষয়ে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তিনি সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি একটি বিদেশি এয়ারলাইনসকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন।
বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশিদা প্রথম আলোকে বলেন, এগুলো অনেক পুরোনো অভিযোগ। তিনি এসব নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। তিনি এ নিয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বেবিচকের গত বছরের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাশিদা বেশির ভাগ সময় কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকেন না। এর জন্য তিনি ছুটির আবেদনও করেন না। আবার যেদিন তিনি কর্মক্ষেত্রে আসেন, সেদিন বিলম্ব করেন।
এ বিষয়ে তাঁকে মৌখিক ও লিখিতভাবে নোটিশ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি মাঝেমধ্যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপসহ অসুস্থর কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুঠোফোন নম্বরে বার্তা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কর্মক্ষেত্রে আসা নিয়ে এই খেয়ালখুশি ছাড়াও রাশিদা তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
এমনকি তিনি বিমানবন্দরে ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে অন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে নিজ সহকর্মীদের মুঠোফোনে হুমকি দেন। কেউ তাঁর কথামতো কাজ না করলে তাঁকে বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অপপ্রচার চালান।
রাশিদার পেশাগত নানা অদক্ষতার বিষয়ও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর পেশাগত যে ধরনের দক্ষতা থাকা দরকার, তা নেই। কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে তিনি তা সঠিকভাবে করতে পারেন না।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিদা সোনা চোরাচালানকারীদের সহযোগিতা করেন। তিনি নিরাপত্তা পাসের ফাইল আটকে ঘুষ নেন। বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন সরবরাহকারী একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বিজনেস ক্লাসের উড়োজাহাজ টিকিট নিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর আসেনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post