মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই স্মার্টকার্ড তৈরি করার অভিযোগে বিএমইটির সিস্টেম এনালিস্ট মো. সাইদুল ইসলাম ও সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুদকের সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ মামলাটি করেন। দুদকের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা নির্ধারিত আবেদনের বাইরে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্টকার্ড বিএমইটি কর্তৃক অবৈধভাবে ইস্যু করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে অন্যকে লাভবান ও নিজে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োগ অনুমোদনের অতিরিক্ত ডাটা এন্ট্রি দিয়ে পরস্পরের যোগসাজশে অতিরিক্ত স্মার্টকার্ড ইস্যুপূর্বক অপরাধ করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার পর এর কপি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) যায়।
এরপর বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা এন্ট্রি দেয়। রিক্রুটিং এজেন্সি বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে, বহির্গমন/কল্যাণ ফিসহ অন্যান্য ফি ও পে-অর্ডার ও চালান কপি জমা নেওয়া হয় এবং সফটওয়্যার সিস্টেমে এই এন্ট্রি দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স্মার্টকার্ডের জন্য বিএমইটির সফটওয়্যারে পারমিট নম্বর দিয়ে রাইট করার অনলাইন অনুমতি নিতে হয়। অনলাইনে পারমিট সাকসেসফুলি দেখানোর পর ক্লিয়ারেন্স ফরমে এই রাইট নম্বর লেখা হয়। ডেস্ক সহকারী ও সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষরসহ ডাটা এন্ট্রি শাখায় প্রেরণ করা হয়। ওই শাখার সফটওয়্যারে এই কর্মীদের তথ্যাদি এন্ট্রি দেওয়া হয়।
পারমিট নম্বরে রাইট নম্বরে উল্লিখিত কর্মীর সংখ্যার সমপরিমাণ কর্মীর তথ্য এন্ট্রি দেওয়া যায়, এর বেশি এন্ট্রি দেওয়া যায় না। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, আটটি রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের নামে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১২ মে পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়োগ অনুমতির সংখ্যা ২ হাজার ৯৬০।
কিন্তু বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার থেকে স্মার্ট ইস্যু করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৮ টি। অর্থাৎ অতিরিক্ত আরও ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট বিএমইটি কর্তৃক অবৈধভাবে ইস্যু করা হয়েছে।
রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত গ্রুপ বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যার সঙ্গে বিএমইটির ওয়েব সাইটে উল্লিখিত ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য গ্রুপে ইস্যুকৃত বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যায় তারতম্য দেখতে পায় দুদক।
এছাড়া অনেক সংখ্যা এডিট ও ডিলিট করে কমানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে প্রদানকৃত নিয়োগ অনুমতির সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টার প্রমাণ পেয়েছে তারা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএমইটির ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের এডিট, ডিলিট করে করে নথিতে মিথ্যা তথ্য, ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে।
সফটওয়্যারের ডেটাবেইসে একমাত্র এক্সেস ছিল বিএমইটির সিস্টেম এনালিস্ট মো. সাইদুল ইসলাম ও সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামের কাছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post