দেশে প্রতি ডলার ১১৮ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করছে অধিকাংশ ব্যাংক। ডলারের এই রেট ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি অনুযায়ী সরকারি মুদ্রা বিনিময় হারের তুলনায় বেশি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিষয়টি অজানা নয় বলেই জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার জন্য গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ব্যবস্থায় প্রতি ডলার ক্রলিং পেগ মিড রেট ধরা হয় ১১৭ টাকা। তবে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে বর্তমানে প্রতি ডলারে ১২০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিলের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১১৮ টাকার বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ১১৯ টাকা থেকে ১২০ টাকার কমে ডলার মিলছে না। অনেকেই বলছেন, ব্যাংকগুলো নিয়ম ভাঙলেও তা উপেক্ষা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জানান, চলমান সংকটের মধ্যে ডলার সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে তাদের ঘোষিত বিনিময় হারের তুলনায় এক টাকা বেশি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। সে হিসেবে ব্যাংকগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের জন্য ১১৮ টাকার বেশি দিচ্ছে। ফলে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ১১৭ টাকা ৮০ পয়সা। এটি এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা। গত ৮ মে এ হার ছিল ১১০ টাকা।
অবশ্য ক্রলিং পেগ চালুর আগেই ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের দাম ১১৮ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। যদিও আনুষ্ঠানিক দাম তখন ছিল ১১০ টাকা। ক্রলিং পেগ হলো বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুদ্রার দামকে নির্দিষ্ট বিনিময় হারের মধ্যে কমবেশি হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে এখন ‘ফরওয়ার্ড সেলিং’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। সেখানে সুদের হার তুলনামূলক বেশি। ‘ফরোয়ার্ড সেলিং’ হলো ভবিষ্যতে ক্রেতাকে যে দামে ডলার দেওয়া হবে তা মেনে চলা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা রিজার্ভ বাড়াতে চায়। তাই মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কিছুটা স্বাধীনতা দিচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। ফলে ২০২২ সালে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে দেশের মুদ্রা বাজার।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে দেশে রিজার্ভ কমেছে ২৪ বিলিয়ন ডলার। গত বুধবার মোট রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এ পরিমাণ ডলার দিয়ে আগামী সাড়ে তিন মাস পর্যন্ত আমদানি খরচ চালানো যাবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post