হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তাঁর মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নাকি কারও চক্রান্ত? এই প্রশ্ন এখন আলোচনার অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এতে আমেরিকার হাত রয়েছে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের চক্রান্তের কথাও বলছেন কেউ কেউ। এসব ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ থেকে মুক্ত নন খোদ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (সুপ্রিম লিডার) আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বয়স ৮৫ বছর। তিনি আর বেশিদিন সর্বোচ্চ নেতার পদে থাকছেন না। তাঁর পরে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌঁড়ে সবার আগে ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি রাইসিই পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হবেন বলে প্রায় নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন সবাই।
কিন্তু আলোচনায় তেমন একটা না থাকলেও সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌঁড়ে ছিলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছেলে মুজতবা খামেনি (৫৫)। ইব্রাহিম রাইসির পর তিনিই এই পদে আসতে পারেন বলে ধারণা ছিল। রাইসির মৃত্যুর কারণে এবার এই মুজতবা খামেনির আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আর এই কারণে ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর কারণ হিসেবে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, মুজতবা খামেনির সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে ইব্রাহিম রাইসিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারেন। তবে, সেই পরিকল্পনা খোদ আয়াতুল্লাহ খামেনি করেছেন কিনা, তা বলা যাচ্ছে না।
সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইরানের রাজনীতির ছায়া হিসেবেই পরিচিত এই মুজতবা। দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাঁর প্রভাব রয়েছে।
কিন্তু এতদিন কোথাও জনসম্মুখে তাঁকে দেখাও যায়নি, তাঁর কথা শোনাও যায়নি। কিন্তু রাইসির মৃত্যুতে এবার পুরো আলোটা গিয়ে পড়ল তাঁর দিকেই। আর এই মৃত্যুতে ইরানের শাসক কাঠামোই বদলে যেতে পারে।
ক্নেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আরাশ আজিজি বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়েছিল, আমি তখন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সময় বদলে গেল। তিনি এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। অগোচরে থাকায় তাঁকে নিয়ে আগ্রহ একটু বেশিই।’
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ৬ সন্তান। এর মধ্যে দ্বিতীয় মুজতবা। বর্তমানে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। এমনকি বাবার দপ্তর তিনিই সামলান। তবে, তিনিই সর্বোচ্চ পদে আসতে রাইসির মৃত্যু ঘটিয়েছেন—এমন মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।
কেননা খামেনির ছেলে সর্বোচ্চ নেতার পদে গেলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলি শাবানি। এ ছাড়া তিনি শিয়ার পুরো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। শিয়া সম্প্রদায়ে তাঁকে এতটা সম্মান দেওয়া হয় না।
সর্বোচ্চ নেতার বিশেষ বিশেষজ্ঞ দলের একজন সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা ইলনাকে বলেন, ছেলের সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার আলোচনায় খুব একটা আগ্রহ দেখান না আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
এমনকি তিনি এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার অনীহাও প্রকাশ করেন। এই বিশেষজ্ঞ দলই সুপ্রিম লিডার বেছে নেবেন। কিন্তু যদি রাইসির মৃত্যু স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না হয়, তাহলে নিয়ম কতটাই বা মানা হবে—এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post