যে সকল ভ্রান্ত ফের্কা সম্পর্কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হল শিয়া। শিয়া শব্দের অর্থ অনুসারী,গোষ্ঠী ইত্যাদি।
অভিশপ্ত ই-হু-দীদের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসাবে প্রখ্যাত সাহাবী আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] এবং প্রখ্যাত সাহাবী মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফইয়ান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত:৬০ হি.]-এর মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাকে কেন্দ্র করেই এই পথভ্রষ্ট শিয়া সম্প্রদায়ের জন্ম। যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানায়। ফলে মীমাংসার জন্য আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আবু মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আর মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আমর ইবনুল আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে শালিস নিযুক্ত করা হয়। এতে একশ্রেণীর লোক আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ ত্যাগ করে। তারা ইতিহাসে ‘খারেজী’ বলে পরিচিত। আরেক শ্রেণী এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। কিন্তু তারা নিষ্ক্রিয় থেকে যায়। তারা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। তাদেরকেই শিয়া বলা হয় (আত-তারীখুল ইসলামী,পৃষ্ঠা:২৭৪-২৭৭)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন,তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার নিয়েই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। (মুসনাদে আহমাদ হা/৬৩০২; বুখারী হা/৩৭৫৩; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৪৯৪-এর ব্যাখ্যা)। পরবর্তীতে শিয়া ফিতনার বিকাশ হয়েছে ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু অভি-শপ্ত ই-হু-দী আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা ও তার অনুসারী যুরারা, আবূ বাসীর, আব্দুল্লাহ ইবনু ই‘য়াফুর, আবূ মিখনাফ লূত ইবনু ইয়াহইয়া প্রমুখ মিথ্যাবাদীদের দ্বারা।
শিয়ারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত: তাদের একদল এমন আছে যারা আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের উপাস্য বলে জানে এবং তাদের ইবাদত করে। তারা ইয়া আলী, ইয়া হাসান, ইয়া হুসাইন ইত্যাদি বলে তাদেরকে ডাকে। তাদের অপর একদল রয়েছে যারা বলে,জিবরীল (মুহাম্মদের নিকট অহী নিয়ে এসে) খিয়ানত করেছে, নবুওয়াতের হকদার আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়।তাদের অপর দল ইমামীয়া,তাদের অপর নাম রাফেযী, আবার তাদেরকে ইসনা ‘আশারিয়্যাও বলা হয়। তারা আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইবাদতকারী। তারা তাদের ইমামগণকে ফিরিশতা ও নবীদের থেকেও উত্তম বলে দাবী করে। এভাবে শিয়াদের বিভক্তি অসংখ্য। তাদের কতক কাফির আবার কতক কাফির নয়।ইমাম শাহরাস্তানী (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, তাদের ২২টি উপদল রয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। তাদের কারও বিদ‘আত তাকে কা-ফির করে দেয়, আবার কারও বিদ‘আত তাকে কা-ফির করে না। এতৎসত্ত্বেও তারা সবাই বিদ‘আতী। শিয়ারা সবাই বিদ‘আতী। এদের যে উপদলটির আক্বীদা (বিশ্বাস) অপেক্ষাকৃত হালকা ত্রুটিপূর্ণ তারা বলে: আলী (রাঃ) অপর তিন খলিফা– আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এর চেয়ে উত্তম। এ দলটি কাফের নয়; তবে এটি সুস্পষ্ট ভুল। কারণ আলী (রাঃ) চার খলিফার মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) তাঁর চেয়ে উত্তম। যদি কেউ আলী (রাঃ) কে এ তিনজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয় তাহলে সে ভুল করল এবং সাহাবীদের ইজমা বা ঐকমত্যের বিরোধিতা করল। তবে সে এই আক্বীদা পোষণের জন্য কা-ফের হবে না; তবে তারা অবশ্যই ভ্রান্ত ও গোমরাহ।
শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল রাফেযী শিয়া। এরা খোমেনীর সাঙ্গপাঙ্গ, এরাই সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক শিয়া। অনুরূপভাবে নুসাইরিয়াহ সম্প্রদায়, যারা হলো সিরিয়ার হাফিজ আসাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও তার দলের ব্যক্তিবর্গ। আর সিরিয়া, ইরান ও ভারতের বাত্বিনী সম্প্রদায়, যারা হলো ইসমা‘ঈলী সম্প্রদায়। শিয়াদের এই তিনটি উপদল সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর। তারা কা-ফি-র সম্প্রদায়। কারন তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কা-ফে-রদের চেয়েও বেশী ভয়ানক কেননা তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনিষ্টকে লুকিয়ে রাখে এবং নিজেদের ওপর মুসলিমদেরকে কা-ফি-রদের চেয়েও বিপজ্জনক মনে করে। তারা কা-ফি-রদের চেয়ে মুসলিমদেরকে বেশি ঘৃণা করে। তারা আহলুস সুন্নাহ’র জান ও মাল নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। যদিও তারা কিছু ক্ষেত্রে মোসাহেবি করে থাকে। তারা মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব (অদৃশ্য) জানে, তাদের ইমামরা নিষ্পাপ, আল্লাহকে ব্যতিরেকে ইমামদেরও ইবাদত করা যায় ফরিয়াদ, জবেহ ও মানত করার মাধ্যমে। তাদের ইমামদের ব্যাপারে এই হলো তাদের অবস্থান। আর রাফিদ্বীরা হলো ইসনা ‘আশারিয়াহ তথা বারো ইমামিয়াহ নামক উপদল। তাদেরকে ‘জা‘ফারিয়্যাহ’-ও বলা হয়। অবশ্য এখন তাদেরকে ‘খুমাইনিয়্যাহ’ (খোমেনীর মতাদর্শের লোকজন) বলা হয়, যারা এখনও মানুষকে বাতিলের দিকে আহ্বান করে। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপদল।এজন্য আমাদের সালাফগন তাদেরকে কাফির ফাতওয়া দিয়েছেন।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বিস্তারিত আলোচনা করে শেষে বলেন: وإنما الكفار منهم الرافضة والنصيرية والإسماعيلية الذين يغلون في أهل البيت ويعبدونهم من دون الله ويرون أن عبادتهم جائزة وأن أئمتهم يعلمون الغيب إلى غير هذا مما يقولون نسأل الله السلامة. فالحاصل: أنهم ينظر في عقائدهم بالتفصيل ولا يقال الشيعة كلهم كفار لا، بل فيهم تفصيل وهم أقسام كثيرة. শিয়াদের মধ্যে শুধু কা-ফি-র হলো রাফিদ্বী, নুসাইরিয়াহ ও ইসমা‘ঈলিয়্যাহ সম্প্রদায়। যারা আহলে বাইতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ইবাদত করে, তাদের ইবাদত করা জায়েজ মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব জানে বলে মনে করে ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। মোটকথা তাদের ‘আক্বীদাহর দিকে বিশদভাবে নজর দিতে হবে। একথা বলা যাবে না যে, শিয়ারা সবাই কা-ফি-র। না, বরং তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তাদের অনেকগুলো শ্রেণি রয়েছে।” (বিস্তারিত দেখুন শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-৩১২৯)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে আরো জিজ্ঞেস হরা হয়:
শিয়া ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মধ্যে পার্থক্য কী, বিষয়টি জানা আমার খুব প্রয়োজন। তাই বিষয়টি স্পষ্ট করলে খুব খুশি হবো।
জবাবে শাইখ বলেন, “শিয়ারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত: তাদের একদল এমন আছে যারা আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের উপাস্য বলে জানে এবং তাদের ইবাদত করে। তারা ইয়া আলী, ইয়া হাসান, ইয়া হুসাইন ইত্যাদি বলে তাদেরকে ডাকে। এ ধরনের শিয়ারা অবশ্যই কা-ফি-র।
তাদের অপর একদল বলে, জিবরীল (মুহাম্মদের নিকট অহী নিয়ে এসে) খিয়ানত করেছে, নবুওয়াতের হকদার আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়।
তাদের অপর দল ইমামীয়া, তাদের অপর নাম রাফেযী, আবার তাদেরকে ইসনা ‘আশারিয়্যাও বলা হয়। তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুএর ইবাদতকারী। তারা তাদের ইমামগণকে ফিরিশতা ও নবীদের থেকেও উত্তম বলে দাবী করে। এভাবে শিয়াদের বিভক্তি অসংখ্য। কতক কা-ফির আবার কতক কা-ফির নয়। একদল আছে যারা বলে, আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু উত্তম। এরা অনেকটা নমনীয় ও সহনশীল দল। তারা কা-ফির নয়, তবে তারা অবশ্যই ভ্রান্ত ও গোমরাহ। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু চতুর্থ আর আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম এরা তিনজন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর আগে তিন খলিফা। এ তিন খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অবশ্যই উত্তম। যখন কেউ তাকে তাদের তিনজনের উপর প্রাধান্য দেয়, সে অবশ্যই ভুল করল এবং সাহাবীদের ঐকমত্যর বিরুদ্ধাচরণ করল তবে সে কা-ফির হবে না। এ ছাড়াও শিয়াদের বিভিন্ন শ্রেণী, দল ও উপদল রয়েছে। যদি কেউ আরও বিস্তারিত জানতে চায় সে যেন ইমামদের লিখিত কিতাবগুলি অধ্যয়ন করে। যেমন, মুহিব্বুদ্দিন আল-খতীব রহ.-এর ‘আল-খুতুতুল আরিদ্বা, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-এর ‘মিনহাজুস সুন্নাহ’, এহসান এলাহী যহীর এর ‘শিয়া ও সুন্নাহ’ ইত্যাদি কিতাবসমূহ পড়ে। , যাতে শিয়াদের দল উপদল, তাদের ভুল-ভ্রান্তি ও তাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা তাদের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হলো, ইমামীয়া-ইসনা আশারিয়া ও নুসাইরিয়া ফের্কাদ্বয় এদেরকে রাফেযা বলা হয়। কারণ, তারা যায়েদ ইবনে আলীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যখন তিনি শাইখাইন -আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে প্রত্যাখ্যান করতে অস্বীকার করেন, তখন তারা তার বিরোধিতা করে এবং তাকে প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং , যে কেউ ইসলামের দাবি করলেই মুসলিম হবে না। ইসলামের দাবি করলে তার দাবিকে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে যাচাই করতে হবে। যে এক আল্লাহর ইবাদত করে, রাসূলকে বিশ্বাস করে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণ করে, সেই কেবল মুসলিম। আর যে নিজেকে মুসলিম দাবি করে; কিন্তু সে ফাতেমা, বাদাবী ও ‘ঈদুরুস প্রমুখদের ইবাদাত করে সে মুসলিম নয়। অনুরূপভাবে যারা দীনকে গালি দেয়, দীন সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে, সালাত ছেড়ে দেয়, তাকে মুসলিম বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে সে মুসলিম নয় অথবা কেউ যদি দীনে ইসলাম নিয়ে উপহাস- বিদ্রূপ করে, সালাত, যাকাত, সাওম অথবা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বিদ্রূপ বা তাকে অস্বীকার করে অথবা বলে, মুহাম্মদ মূর্খ বা সে তার রিসালাতকে পূর্ণ করে নি, মানুষের নিকট পৌঁছায় নি, এরা সবাই কা-ফির। আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন”।( বিন বায;মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/২৮; পৃষ্ঠা: ২৫৭)
ইমাম লালাকায়ী শু’বা থেকে বর্ননা করেছেন,তিনি (শু’বা) বলেন, “আমি ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে রাফিদীদের উপর দুটি বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাধান্য দিয়েছি।
ইয়া’হু’দীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ মূসা (আ.) এর সাথীগণ।খ্রিস্টানদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ ঈসা (আ.) এর হাওয়ারিগণ।আর (রাফেদী)শিয়াদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃতোমাদের উম্মাহর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোক কারা?তারা বললঃ মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীগণ!ফলে যখন তাদেরকে ইস্তেগফার করার আদেশ করা হলো, তখন তারা তাদেরকে গালি দেওয়া শুরু করলো।(ইমাম লালাকায়ি:শারহু উসুলি ই’তিক্বাদি আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআত,খন্ড:৮, পৃষ্ঠা:১৫৫১;আরো দেখুন ইবনু তাইমিয়া;মিনহাজুস সুন্নাহ;খন্ড:১ পৃষ্ঠা;২৭)
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
“এই সম্প্রদায় যাদেরকে নুসাইরিয়্যাহ নামে নামকরণ করা হয়েছে,(নুসাইরিয়্যাহ সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই যে, এটি একটি সীমালঙ্ঘনকারী শিয়া সম্প্রদায়),-তারা মূলত সকল বাতেনী সম্প্রদায়- এরা ই-য়া-হুদী ও নাসারা সম্প্রদায়ের থেকে ভয়ানক কা-ফের। বরং এমনকি তারা মুশ-রিকদের মধ্য হতে অনেকের চাইতে তারা অধিক ভয়ানক কা-ফের। আর তাদের ক্ষতিসাধন অনেক যুদ্ধ-কারী কা-ফে-রদের ক্ষতিসাধনের চেয়েও বড় ও ভয়ানক।যেমন,তাতারী সম্প্রদায়,ফিরিঙ্গী জাতি/ইউরোপীয় জাতি ইত্যাদি….। অথচ তারা সদা সর্বদাই মুসলিমদের সকল শত্রুদের সাথে রয়েছে।আর তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নাসারাদের সাথে রয়েছে।তাদের নিকট সবচেয়ে বড় বিপদ হল মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাতারী সম্প্রদায়কে সহায়তা করা। অতঃপর তাতারী সম্প্রদায় শুধু তাদের সহায়তায় মুসলিম শহরে প্রবেশ করে বাগদাদ শহরের খলিফা ও আরো মুসলিম রাজাদের হত্যা করে।(আল-মাওসুআতুল মাইসারাহ ফিল-আদয়্যান ওয়াল-মাযাহেব ওয়াল-আহযাবিল মুয়া’সারাহ: খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৩৯৩-৩৯৯)।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] রাফিদ্বী শিয়াদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “তাদের কুফর ই-হুদি-নাসা-রাদের কুফরের চেয়েও গুরুতর। কেননা ইহুদি-খ্রি-ষ্টান-রা হলো সত্ত্বাগত কাফির। পক্ষান্তরে তারা (রাফিদ্বীরা) হলো দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মুরতাদ। আর মুরতাদ হওয়ার কুফর ইজমা‘র (মতৈক্য) ভিত্তিতে সত্ত্বাগত কুফরের চেয়েও গুরুতর। এজন্যই তারা মুসলিম জনসাধারণের বিরুদ্ধে কা-ফি-রদের সহযোগিতা করে। যেমন তারা মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে (মুসলিম জনপদে গণহত্যা পরিচালনাকারী) তাতার সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করছে।” (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া,খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪২১)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, “রাফিজীদের মাজহাব ধর্মত্যাগী (দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মুরতাদ) খারেজীদের মাজহাবের চেয়েও নিকৃষ্ট , কারণ খাওয়ারিজদের লক্ষ্য হল উসমান ও আলী এবং তাঁদের ভক্তদের কাফের ঘোষণা করা, আর রাফিজীদের লক্ষ্য হল আবু বকর, ওমর, উসমান এবং প্রথম পর্যায়ের সাহাবীদেরকে কা-ফের ঘোষণা করা। তারা খারেজিদের চেয়েও বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতকে অস্বীকার করে । তাদের মধ্যে রয়েছে মিথ্যা , অপবাদ , বাড়াবাড়ি এবং নাস্তিকতা যা খারেজিদের মধ্যে নাই। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কা-ফের-দেরকে সহযোগিতা করার বিষয়টি তাদের মধ্যে রয়েছে যা খারেজিদের মধ্যে নাই। রাফিজিরা তাতার এবং তাদের রাষ্ট্রকে ভালোবাসে। কারণ এটি তাদের গৌরব নিয়ে আসে যা একটি মুসলিম রাষ্ট্রে ঘটে না এবং তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশ-রিক, ই-হু-দি এবং খ্রি-স্টান-দের সহযোগিতা করে। খোরাসান ইরাক এবং শামের ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাতারদের প্রবেশের বিষয়ে তারা ছিল সবচেয়ে বড় মাধ্যম। যার ফলে ইসলামী রাষ্ট্রগুলো ছিনিয়ে নিতে, মুসলিমদের হত্যা করতে, বন্দী করতে তারা ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছিল। ইবনে আলকামা এবং তার তার সহযোগিদের সাথে যা ঘটেছিল এবং দুধওয়ালার সাথে দুধের বিষয়ে যা ঘটেছিল তা সাধারণ মানুষের জানা। ঠিক তেমনিভাবে মুসলিম এবং নাসারাদের যুদ্ধের মাঝেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাফিজিদের সহযোগিতা থাকবে এটা মানুষ জানতো। তারা দেশ কেড়ে নিতে তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল। যখন তাতার রা আসবে আর রাফিজিদের অপদস্ত করবে তখন আক্কা এবং অন্যান্য গোত্রগুলো বিজয় লাভ করবে। যখন নাসারা এবং মু-শ-রিকদের উপরে মুসলিমরা বিজয় লাভ করবে তখন রাফিজিরা চরম অপমান হবে। মুসলমানদের উপরে নাছার এবং মু-শ-রি-করা যখন বিজয় লাভ করবে তখন রাফিজিদের নিকটে সেই দিনটি হবে খুব আনন্দের উল্লাসের । আর রাফিজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিল নুসাইরি এবং ইসমাইলীদের নাস্তিক ও বিধর্মীরা, খোরাসান, শাম এবং ইরাকদের থেকে তাদের মতই অকট্য নাস্তি-করা। রাফিজিরা হল জাহমি কাদরিয়্যাহ । যাদের মাঝে ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যা অপবাদ যা খারেজিদের চেয়েও অনেক ভয়ানক। যাদের সাথে আল্লাহর অনুমতি ক্রমে আমিরুল মুমিনিন আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং অন্যান্য সাহাবীগণ যুদ্ধ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তারা শরীয়তের বিধি-বিধানগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল যেটা ছিল তাদের চেয়েও বেশি ভয়াবহ যারা যাকাত অস্বীকার করেছিল। আর যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে আবুবকর এবং অন্যান্য সাহাবীগণ যু-দ্ধ করেছিলেন”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৫২৭)
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ [মৃ:৪৫৬ হি.] বলেন, “রাফেযীদের দাবী সমূহের অন্যতম হল, কুরআনের ইবারতের পরিবর্তন। কারণ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তারা নতুন একটি ফের্কা। এটি এমন একটি দল যারা মিথ্যাচার ও কু-ফ-রীর দিক থেকে ই-হু-দী-খ্রী-ষ্টান-দের স্রোতে পরিচালিত হয়’ (আল-ফিছাল ফিল মিলাল,২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা; ৬৫)।
বিশিষ্ট তাবেঈ শাইখুল ইসলাম ইমাম ত্বালহা বিন মুসাররিফ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১২ হি ] , الرافضة لاتنكح نساؤهم ولاتؤكل ذبائحهم؛ لأنهم أهل ردة ” “রাফেযী সম্প্রদায়ের মহিলাদেরকে বিয়ে করা যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ তারা মুর-তাদ বা ধর্ম-ত্যাগী সম্প্রদায়”। (আল-ইবানাতুস সুগরা, পৃষ্ঠা: ১৬১)
ইমাম আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃ.১৮২ হি.] বলেন,, لا أصلي خلف جهمي، ولا رافضي، ولا قدري
“আমি কোন জাহমী, রাফেযী শী‘আ ও তাক্বদীর অস্বীকারকারী ক্বাদারিয়াদের পিছনে সালাত আদায় করি না”(শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ, ৪/৭৩৩ পৃ)।
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৫৬ হি.] তাঁর খালকু আফ‘আলিল ‘ইবাদ গ্রন্থে বলেন;
ما أبالي صليت خلف الجهمي والرافضي أم صليت خلف اليهود والنصارى ولا يسلم عليهم ولا يعادون ولا يناكحون ولا يشهدون ولا تؤكل ذبائحهم
“আমি কোন পরওয়া করি না, আমি জাহমী ও রাফেযীর পিছনে সালাত পড়লাম, নাকি ই-হু-দী ও খ্রী-ষ্টা-নের পিছনে সালাত পড়লাম। তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে না, তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া যাবে না, তাদেরকে বিয়ে করা যাবে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় শরীক হওয়া যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না’ (খালকু আফ‘আলিল ইবাদ, পৃষ্ঠা; ১২৫)।আব্দুল করীম শহরাস্তানী [মৃ:৫৪৮ হি.] বলেন,শী‘আদের দাবীসমূহ কুরআনের উপরও দলীল নির্ভর নয়, মুসলিমদের উপরও নয়। কারণ শী‘আরা মুসলিমদের অন্তর্ভুুক্ত নয়’ (আল-মিলাল ওয়ান নিহাল,খন্ড:২পৃষ্ঠা: ৭৮)।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post