মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি থমকে গেছে। উৎপাদন, ভোগ, চাহিদা, জোগান ব্যবস্থাসহ অর্থনীতির সব উপাদান বর্তমানে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ফলে দেশের কর্মক্ষম মানুষ যেমন কষ্টের শিকার হচ্ছেন, তেমনি একইভাবে প্রবাসীরা বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশিরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তেল অর্থনীতি নির্ভর ওইসব দেশ থেকে ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে কয়েক লাখ বাংলাদেশি। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ হচ্ছে এবং প্রবাসীরা ফিরলে তাদের সমাজে আবারও আত্মস্থ করার উপায় ভাবছে সরকার।
রবিবার (২৬ এপ্রিল) মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এ বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সোমবার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ওই রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ওসব দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব, শ্রম বাজার পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের অবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেল নির্ভর এবং বর্তমানে এই প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম শূন্য এবং ভবিষ্যতের বাজারে (ফিউচার মার্কেট) এটি ঋণাত্মক, এই পরিস্থিতিতে ওসব দেশের অর্থনীতি আগের অবস্থায় নেই।’
মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশিদের একটি অংশ ‘ফ্রি ভিসা’ নিয়ে যায় অর্থাৎ ভিসাতে যে কোম্পানির নাম উল্লেখ থাকে ওই কোম্পানিতে তারা কাজ না করে নিজেদের মতো অন্য কাজ খুঁজে নেয় এবং এই ব্যবস্থাটি অবৈধ। সৌদি আরবে কর্মরত ২০ লক্ষাধিক বাংলাদেশির মধ্যে এর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ এবং তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই এখন কোনও কাজ নেই।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক জানান, উপসাগরীয় ছয়টি দেশের অভিবাসন নীতি মোটামুটি একই ধরনের। এখন অর্থনীতি খারাপ হওয়ার কারণে তারা লোক নেওয়া বন্ধ করেছে এবং ওসব দেশে অপ্রয়োজনীয় অভিবাসীদের বিষয়ে তারা একটি অবস্থান নিচ্ছে।
ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতারে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে এবং ওসব দেশে অর্থনীতি খারাপ হওয়ার কারণে একটি বড় অংশ ফেরত আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিশ্বের অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সম্পর্কে ধারনা আছে সরকারের এবং এর ফলে প্রবাসীদের ওপর প্রভাব নিয়ে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণসহ জড়িত অন্যরা চিন্তা শুরু করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আমাদের এ বিষয়ে একটি অবস্থান নিতে হবে।’
পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নিয়ে ওই কমিটি ফেরত আসা প্রবাসীদের কীভাবে সমাজে আত্মস্থ করে নেওয়া যায় সেটি নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, যারা ফেরত আসবে তাদের সাত লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবে তারা এবং এর ফলে দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ওসব মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে পর্যটন নির্ভর মালদ্বীপে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশি কর্মরত আছে এবং সেখানে গত চার মাস ধরে মৎস্য আহরণ ছাড়া অন্য ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নেই এবং চাপ আছে তাদের ফেরত আনার।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘পাঁচ লাখের কিছু বেশি জনসংখ্যার মালদ্বীপে পর্যটন ও মৎস্য শিল্প ছাড়া অন্য তেমন কোনও শিল্প নেই। কৃষিপণ্যের প্রায় প্রতিটি তাদের আমদানি করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে লক্ষাধিক বিদেশিকে কোনও কাজ ছাড়া তাদের পক্ষে খাওয়ানো মুশকিল বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা তাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছি এবং সব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
https://www.youtube.com/watch?v=x798Lg4RxQM&t=17s
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post