ভারতীয় মসলাসহ ৫২৭ খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডও পণ্যগুলো নিয়ে তদন্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতীয় মসলার শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও জনস্বাস্থ্যে পণ্যগুলোর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিএসটিআইয়ের রসায়ন পরীক্ষণ উইংয়ের পরিচালক গাজী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা আমাদের স্বাভাবিক রুটিন কাজ না। এটা নতুন ধরনের কাজ। দেশে এসব পরীক্ষার জন্য সব ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে।
তবে এটা এখনই হয়তো হবে না। আমাদের এজন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল কিনতে হবে। আমরা তা কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। কেমিক্যাল হাতে পেলেই পরীক্ষা করা শুরু করবো।
১৮০টি দেশে দুই শতাধিক মসলা ও মসলাজাতীয় পণ্য রফতানি করে ভারত, যার বাজারমূল্য ৪০০ কোটি ডলার। দেশটির অভ্যন্তরীণ মসলা বাজারের আকার ১ হাজার কোটি ডলার, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মসলা ভোক্তা করে তুলেছে।
উচ্চ মাত্রার ইথিলিন অক্সাইড আছে সন্দেহে গত এপ্রিলে ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি মসলাপণ্যের বিক্রি বন্ধ করে দেয় সিঙ্গাপুর ও হংকং। ঐ মাসেই ইইউর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ৫২৭ ভারতীয় খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকটির উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানায়।
বর্তমানে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ও অস্ট্রেলিয়া এ দুই জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। মালদ্বীপ এরই মধ্যে পণ্য দুটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। চলমান এ বিতর্কের মধ্যে নিউজিল্যান্ডেও বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালানো হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, এটি মানবদেহে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।
জীবাণুনাশক উপাদানটি খাদ্যপণ্যে এখন কোনো মাত্রাতেই ব্যবহার হওয়ার কথা না। আমাদের দেশেই পরীক্ষা চালিয়ে খাদ্যে এর উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব।
এজন্য ল্যাবে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের বিএসটিআইয়ের ল্যাব সে মানে উন্নীত হয়েছে কিনা, তা তাদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে মসলার চহিদা ৩৩ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ২৭ লাখ টন উৎপাদন হয়। বাকি ছয় লাখ টন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
এজন্য সরকারের প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে। আর দেশে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার বিদ্যমান। আর মসলার চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে, যার প্রধানতম উৎস ভারত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post