দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতার সার্টিফিকেট দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গেলে বেতন-ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন প্রবাসীরা।
গতকাল (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত অভিবাসন খাতের জাতীয় পর্যায়ের অংশীজনদের এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
এ সময় মন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের সংখ্যাগত পরিসংখ্যানের যথার্থতা ও প্রশিক্ষণের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘কর্মীদের প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমমানের না হলে কর্মীরা অন্যান্য দেশের কর্মীদের মতো সমগুরুত্ব পাবে না। বিএমইটিতে যারা শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ দেন তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, কোভিড ১৯ শুধু আমাদেরই নয় বিশ্বব্যাপী একটি অপ্রত্যাশিত মহামারী; যাতে আক্রান্ত হয়েছে প্রতিটি খাত। কোভিডের কারণে অভিবাসন খাতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলা করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে, সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা কার্যকরভাবে কোভিড মোকাবেলা করতে পারবো এবং এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে পারবো।
করোনা মোকাবেলায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অভিবাসী কর্মীদের জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই সরকার তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন তা যেন তিনি এবং তাদের পরিবার ভোগ করতে পারেন।
প্রবাসীদের ডাটা সংগ্রহ এখন সময়ের দাবী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন আমাদের গ্রাফ দেখি তখন কিন্তু অদক্ষ কর্মীর সংখ্যা কম দেখায়। এটাও কিন্তু আমাদের ডাটা কালেকশনের সিস্টেমের ভুল আছে। ডাটা কালেকশনে ভুল থাকলে তাহলে পরিকল্পনাতেও ভুল হয়ে যায়। সেজন্য আমরা আমাদের ডাটাবেজে পরিবর্তন আনতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘যে পরিসংখ্যান আমাদের রয়েছে তা বিরাট একটা ইস্যু। বিশ্বের ১৭৪টি দেশের মধ্যে কোন দেশে কতজন প্রবাসী আছেন, এই ডাটাবেজের ওপর এখন গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র ইনকামিং আর আউটগোয়িং ডাটাবেজ হলেই হবে না, যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন তাদের মধ্যে কতজন পুনরায় বিদেশ যাচ্ছেন আর কতজন দেশে থাকছেন সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
যারা দেশে থেকে যাবেন তাদের জন্য সরকারীভাবে কি ধরনের সহযোগিতা করা যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়াও যারা পুনরায় বিদেশ যাবেন, তাদেরকে কিভাবে ঋণ সহায়তা দেওয়া যায়, এই ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে এখন।
আরো পড়ুনঃ ইতালির নতুন ভিসা প্রত্যাশীদের দুয়ার খুললো
প্রবাসী কর্মীদের ঋণ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৭০০ কোটি টাকার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, এ টাকা ব্যাংকে ফেলে রাখতে চাই না। এগুলো প্রবাসীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে ব্যবহার করতে চাই। এ টাকা শ্রমিকের কাছে, তাদের পরিবারের কাছে যাবে। এ টাকা তাদের মধ্যে সুষ্ঠু বিতরণ ও ব্যবহার করা গেলে তাদের জীবনে পরিবর্তন আসবে।’ তিনি অভিবাসন খাতের সঙ্গে জড়িত সকলের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, “অনেকেই আছেন যারা ছেলেমেয়েকে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য দুই/এক লাখ টাকা দিতে চান না। কিন্তু দালালচক্রের খপ্পরে বা প্রতারণার কবলে পড়ে ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠান। কিন্তু তারা ভাবেন না এ টাকা কত দিনে ছেলেমেয়ে তুলতে পারবেন। অনেকেই জেল খেটে সর্বস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন।’
আরো পড়ুনঃ ১০ দিন পরেই ওমানে নতুন আইন কার্যকর
কোভিড পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক শ্রম বাজারে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, করোনা পরবর্তীতে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা থাকবেনা। এ জন্য বিদেশ যাওয়ার পূর্বে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শামসুল আলম।
অভিবাসনের সাম্প্রতিক চিত্র ও প্রবণতা নিয়ে বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীর খাইরুল আলম এবং নিরাপদ অভিবাসন ও কার্যকর পুনঃ-একত্রীকরণের বিষয়ে কিভাবে সম্মিলিতভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে সুইজ সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, বোয়েসল এর কর্মকর্তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post