ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বাড়ছে বৈশ্বিক চাপ।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বেঁকে বসায় যুদ্ধবিরতি হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।
এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে আর কোনও আপস না করার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় ইসরায়েলকে আর হামাস কোনও ছাড় দিতে ইচ্ছুক নয় বলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বুধবার জানিয়েছে। যদিও গত সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের আগ্রাসন থামানোর লক্ষ্যে কায়রোতে এখনও আলোচনা চলছে।
আর এর মধ্যেই ইসরায়েল বুধবার দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ট্যাংক ও বিমান হামলা চালিয়েছে এবং শহরটিতে বড় ধরনের হামলার হুমকি দিয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী গত মঙ্গলবার মিসরের সাথে রাফা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করেছে। এটি গাজায় সহায়তা সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথ এবং আহত রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্যও এটিই ছিল একমাত্র পথ। ইসরায়েলি সেটি বন্ধ করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এর আগে গত সোমবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা গাজা যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়।
কিন্তু এর পরপরই ইসরায়েল জানায়, এই প্রস্তাবের শর্তগুলো তাদের দাবি পূরণ করেনি এবং চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি রাফাতে হামলার ঘোষণা দেয় দেশটি।
এছাড়া গত সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রাফাতে আকাশ ও স্থল থেকে আক্রমণ চালায় এবং শহরের কিছু অংশ থেকে বাসিন্দাদের ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মূলত গাজার এই শহরটি এখন ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল।
রয়টার্স বলছে, কাতারে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য ইজ্জাত আল-রেশিক বুধবার গভীর রাতে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি গত সোমবার গৃহীত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বাইরে যাবে না। ওই চুক্তির ফলে গাজায় কিছু ইসরায়েলি বন্দির পাশাপাশি ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হবে।
রেশিক বলেছেন, ‘ইসরায়েল কোনও ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আন্তরিক নয় এবং তারা (ইসরায়েল) রাফা আক্রমণ এবং ক্রসিং দখল করার জন্য যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে একটি আবরণ হিসাবে ব্যবহার করছে।’
অবশ্য ইসরায়েলের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত সোমবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, হামাস যে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে তা মিসরীয় প্রস্তাবের চেয়ে খুবই দুর্বল এবং এতে এমন কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ইসরায়েল গ্রহণ করতে পারে না।
এদিকে মঙ্গলবার থেকে কায়রোতে হামাস, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের প্রতিনিধিদল বৈঠক করছে। ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মিসরের রাষ্ট্র-অধিভুক্ত আল কাহেরা টিভি বলেছে, কায়রোতে এই আলোচনা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তা রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার বলেছে, হামাস তার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংশোধন করেছে এবং এই সংশোধন চলমান আলোচনায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে।
হামাসের সর্বশেষ বিবৃতির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ওয়াশিংটন আরও দাবি করে, দুই পক্ষ (চুক্তি থেকে) খুব বেশি দূরে নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, চুক্তির সুযোগ রয়েছে… দুই পক্ষই যথেষ্ট কাছাকাছি রয়েছে এবং চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য যা করা উচিত তাদের তা করা উচিত।’
রাফায় হামলা করলে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া ইসরায়েলের জন্য নির্ধারিত বোমার একটি চালান ইতোমধ্যেই আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
বুধবার বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বোমাগুলো ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েলের দাবি, রাফাতে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে পরাস্ত করতে তাদের অবশ্যই সেখানে হামলা করতে হবে।
যদিও এই শহরটি বর্তমানে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। তারা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে রাফা শহরে পালিয়ে এসেছে।
হামাস বলেছে, বুধবার তাদের যোদ্ধারা রাফার পূর্বে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াই করেছে এবং ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা শহরের দীর্ঘ পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের কাছে ভারী কামান দিয়ে ইসরায়েলি সৈন্য এবং সামরিক যানবাহনে আক্রমণ করেছে।
বুধবার রাফাহ শহরের মাঝখানে ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলা পড়ে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পশ্চিম রাফাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও চারজন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা পূর্ব রাফা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি স্থানে হামাসের অবকাঠামো খুঁজে পেয়েছে এবং রাফা ক্রসিংয়ের গাজা অংশে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান পরিচালনা কোর পাশাপাশি গাজা উপত্যকা জুড়ে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post