পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যু করতে গিয়ে বাংলাদেশি আইনের জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা কয়েক লাখ প্রবাসী।
এ সমস্যার সমাধান না হলে দেশে ব্যবসা- বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন প্রবাসীরা।
গতকাল দুপুরে সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
তিনি বলেন, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যবাধকতা ও সশরীরে উপস্থিত হওয়ার যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিশেষত বয়োজ্যেষ্ঠ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। এ নিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
তিনি জানান, ‘সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বণ্টন, মামলা দায়ের ও মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রয়োজন পড়ে। এটা শত শত বছর ধরে চলে আসা স্বীকৃত আইনি পন্থা।
আগে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিধান ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রবাসী বাঙালিদের বরাত দিয়ে ব্যারিস্টার নাজির আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করতে গিয়েও অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে ৬ থেকে ৮ মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। অসুস্থ অনেকে সশরীরে উপস্থিত হতে অক্ষম হলে তার কাজ সম্পাদন করার সুযোগ থাকে না।
এতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষা ও অধিকার দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের স্বীকৃত আইডি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক এই নিয়মটি চালু করা হয়েছে মাত্র দু’বছর আগে। যা আগে ছিল না। নতুন নিয়ম করে এ জটিলতা বাড়ানো হয়েছে।’
পুরাতন নিয়মের কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, ‘সাত থেকে আট বছর আগ পর্যন্ত বৃটেন থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার নিয়ম ছিল ড্রাফট করে আইডিসহ যেকোনো ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে গিয়ে দস্তখত করতে হতো।
পরে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের পাঠিয়ে লিগেলাইজেশন করে হাইকমিশনে অ্যাটাস্টেশনের জন্য পাঠানো হতো। তখন সশরীরে কেবলমাত্র ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে উপস্থিত হতে হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাত বছর আগে করা নিয়মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সশরীরে হাইকমিশনে আইডিসহ (যেকোনো ধরনের পাসপোর্ট) উপস্থিত হতে হয়। এতে প্রবাসীরা বিশেষ করে যারা দূরে থাকেন বা বয়স্ক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা সমস্যায় পড়েন।
হাইকমিশন কয়েক জায়গায় মোবাইল কনস্যুলার সেবা চালু করায় সমস্যা কিছুটা দূর হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর আগে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করায় কয়েক লাখ প্রবাসী পড়েছেন বিপাকে।’
যেকোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের ইস্যুকৃত পাসপোর্টই সর্বোচ্চ আইডি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, ‘বৃটিশ পাসপোর্ট বা বৃটিশ পাসপোর্টে যাদের ‘নো ভিসা রিকয়ার্ড ফর ট্রাভেল টু বাংলাদেশ’ স্টিকার আছে তাদেরকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করতে আলাদা পাসপোর্ট করার বাধ্যবাধকতা অমূলক।
কারণ- বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বা পিতা-মাতার নাগরিকত্ব বা বাংলাদেশের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগের প্রকৃত প্রমাণপত্র ছাড়া এ স্টিকার ইস্যু করা হয় না।
এত কিছুর পরও কেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক তার ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি।’
জটিলতা তৈরি করায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রবাসীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করেন ব্যারিস্টার নাজির।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন নিয়ম করে প্রবাসীদের বিড়ম্বনায় ফেলে, তাদের সম্পত্তির অচলাবস্থায় প্রবাসীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব জটিলতা নেই বলে তারা সেদিকে ঝুঁকছেন।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post