কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের দ্বৈরথ চলছে দশকের পর দশক ধরে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি দেশটির মন্ত্রীদের নানা বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তেজনার পারদ বেশ বেড়েছে।
পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করা হবে বলে সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
আর এরই জবাবে বেশ কঠোর মন্তব্যই করেছেন ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান হাতে চুড়ি পরে বসে নেই এবং তাদের কাছেও পরমাণু বোমা আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আজাদ কাশ্মিরকে ভারতের সাথে একীভূত করা হবে,’ বলে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং জম্মু ও কাশ্মির ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ রোববার বলেছেন, পাকিস্তান চুড়ি পরে বসে নেই এবং তাদের কাছেও পরমাণু বোমা রয়েছে যা আমাদের ওপর পড়বে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী যদি একথা (আজাদ কাশ্মিরকে ভারতের সাথে একীভূত করার কথা) বলে থাকেন, তাহলে সেটি দখলে সামনে এগিয়ে যান।
"Pakistan Not Wearing Bangles": Farooq Abdullah's Controversial Comment https://t.co/LZdb1yVhGS pic.twitter.com/PkX8eWQJRP
— NDTV (@ndtv) May 6, 2024
আমরা কে থামানোর? কিন্তু মনে রাখবেন, তারা (পাকিস্তান)ও চুড়ি পরে বসে নেই। তাদের কাছে পরমাণু বোমা আছে এবং দুর্ভাগ্যবশত, সেই পরমাণু বোমা আমাদের ওপর পড়বে।’
এর আগে গত এপ্রিলের শুরুতে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারতে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা বিবেচনা করে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের (পিওকে) জনগণ নিজেরাই ভারতের সাথে থাকার দাবি করবে।
সেসময় পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় রাজনাথ সিং তার বিতর্কিত মন্তব্যে বলেন, ‘চিন্তা করবেন না। আজাদ কাশ্মির (পিওকে) আমাদের ছিল, আছে এবং থাকবে। ভারতের শক্তি বাড়ছে।
সারা বিশ্বে ভারতের প্রতিপত্তি বাড়ছে এবং আমাদের অর্থনীতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এখন কাশ্মিরের (পিওকে) আমাদের ভাই ও বোনেরা নিজেরাই ভারতের সাথে আসার দাবি করবে।’
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর রোববার বলেছেন, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির ভারতের অংশ এবং ভারতীয় সংসদের একটি রেজুলেশন রয়েছে, যা বলে— পিওকে দেশের (ভারতের) অংশ।
তিনি দাবি করেন, জনগণকে আজাদ কাশ্মির সম্পর্কে ভুলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, তবে এটি এখন আবার ভারতের জনগণের চেতনায় ফিরে এসেছে।
কটকে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি দাবি করেন, ‘পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির কখনোই এই দেশের (ভারতের) বাইরে ছিল না। এটি এই দেশের অংশ। ভারতীয় সংসদের একটি রেজুলেশন রয়েছে যে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির অনেকটাই ভারতের অংশ।
এখন, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরকে অন্যরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিলো, যখন আপনার এমন কেউ থাকে যে বাড়ির নিরাপত্তায় দায়িত্বশীল রক্ষক নয়, তাহলে কেউ বাইরে থেকে এসে চুরি করে। এখানে আপনি অন্য দেশকে আসার সুযোগ দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে, তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।
এছাড়া ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান – কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।
সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন – এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।
অন্যদিকে জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মিরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত।
সেসময় জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post