পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের একটি বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। বিমানঘাঁটিটি রাজধানী নিয়ামির ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত।
গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নাইজারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। ক্ষমতা দখলের পরপরই জান্তা সরকার ওয়াশিংটনকে সে দেশে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার সেনা সরিয়ে নিতে বলে।
নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাইজার ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল। জঙ্গিরা ওই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রুশ বাহিনী যু্ক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সঙ্গে বিবাদে জড়াচ্ছে না, বরং তারা ১০১ বিমানঘাঁটির অন্য একটি হ্যাঙ্গার ব্যবহার করছে।’
রাশিয়ার সমারিক বাহিনীর নাইজারের ১০১ বিমানঘাঁটিতে সেনা পাঠানোর এ সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই দেশের সেনাসদস্যরা সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি অবস্থান করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চিরবৈরি দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা বর্তমানে অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
নাইজারের জান্তা সরকার সে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের আর দেখতে চাইছে না। এ অবস্থায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র নাইজার থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিতে রাজি থাকার কথা জানায়। কিন্তু সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্ত বলেন, ‘পরিস্থিতি একদমই ভালো নয়। তবে স্বল্প সময়ের জন্য মানিয়ে নেয়া যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে ওয়াশিংটনে অবস্থিত নাইজার ও রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মাত্র ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে নাইজারে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে। যে ঘাঁটি পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামপন্থি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল।
কিন্তু গত বছর সেনাঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নাইজারে ক্ষমতার পালা বদল হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স উভয়ের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতি হয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর গণতন্ত্রপন্থি নেতাদের সঙ্গেও নিজেদের দূরত্ব বাড়িয়েছে নাইজার। তারা বরং বুরকিনা ফাসো ও মালির মত জান্তা নেতৃত্বাধীন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে।
ওই তিন দেশেই গত কয়েক বছরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। তারা পশ্চিম আফ্রিকা আঞ্চলিক পর্যদ ইকোনোমিক কমিউনিটি ফর ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোয়াস) থেকে বেরিয়ে গেছে।
কারণ, অভ্যুত্থানের পর ইকোয়াস থেকে জান্তা বাহিনীকে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলা হয়েছিল।
তারা এমনকি ফ্রান্স সমর্থিত জি৫ সাহেল ফোর্স থেকেও বেরিয়ে গেছে। বলেছে, এই বাহিনী অকার্যকর এবং আফ্রিকার সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করে। অ্যালায়েন্স অব সাহিল স্টেটস নামে তারা তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post