পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়তনের দেশ উত্তর আমেরিকার কানাডা। আয়তনের হিসাবে জনসংখ্যা খুবই কম। কিন্তু মানুষের জীবনমান খুব উন্নত। বসবাসের জন্যও নিরাপদ। সারা দুনিয়ায় কানাডা একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সুপরিচিত।
আর এসব মিলিয়েই কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। উন্নত বিশ্বের যে দেশগুলোতে যেতে এবং থাকতে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলোর নাগরিকরা মুখিয়ে থাকেন তার মধ্যে কানাডা প্রধানতম।
আগামী ৩ বছরে কানাডা ১২ লাখ ইমিগ্র্যান্ট বা অভিবাসী নেবে, সম্প্রতি এমন একটি সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু অসাধু আদম ব্যবসায়ী তা পুঁজি করে নিরীহ মানুষের জন্য ফাঁদ পেতে বসেছে। তাদের বিজ্ঞাপনের ভাবখানা এমন যেন কানাডা উক্ত ১২ লাখ অভিবাসী শুধু বাংলাদেশ থেকেই নেবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া।
আরো পড়ুনঃ ইতালির নতুন ভিসা প্রত্যাশীদের দুয়ার খুললো
এর আগেও এ ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে বহু বাংলাদেশি প্রতারিত হয়েছেন। কানাডার ভিসা পেতে সাহায্য করার নামে বহু প্রতারক প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। সুতরাং এসব বিষয়ে সতর্ক না থাকলে প্রতারণার আশংকা রয়েছে শতভাগ।
ইতোপূর্বে এ ধরণের খবর এবং বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়ে হয়েছেন। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহীদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এই ১২ লাখ অভিবাসী ‘গণহারে’ শুধু বাংলাদেশ থেকেই নিবে না, বিশ্বের ‘ইমিগ্র্যান্ট প্রোভাইডার’ সকল দেশ থেকে বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিদের নেয়া হবে। ফলে তা নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কানাডায় খোজনিয়ে জানাগেছে, এমনিতেই কানাডা ঐতিহাসিক ভাবে প্রতি বছর পুরো বিশ্ব থেকে প্রায় ৩ লক্ষ অভিবাসী গ্রহণ করে। যেমন বিগত বছরওয়ারি তথ্য- ২০১৫ সালে ২লক্ষ ৪১ হাজার, ২০১৬ সালে ৩ লক্ষ ২৩ হাজার, ২০১৭ সালে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার, ২০১৮ সালে ৩ লক্ষ ৪ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার জন অভিবাসী নিয়েছে দেশটি।
তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে এই সংখ্যাটা প্রায় অর্ধেকের চেয়েও নিচে নেমে এসেছে। যদিও সরকার এখনো ২০২০ এর সঠিক সংখ্যাটি প্রকাশ করেনি, তবে এটা হয়তো ১ লক্ষ ৫০ হাজার এর আশেপাশেই হবে। তো এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে কম এসেছে প্রায় দেড় লক্ষ লোক।
আরো পড়ুনঃ ইতালিতে সিজনাল ও নন-সিজনাল কর্মী নিয়োগ
সে প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের ভাগে অভিবাসীর সংখ্যা খুব একটা বেশি না। যদিও কোটা ভিত্তিতে লোক নেয়ার প্রচলন নেই এবং তা যোগ্যতার ভিত্তিতে নেয়া হয়। সেই যোগ্যতা থাকলে দালালচক্রের খপ্পরে না পড়ে, নিজে নিজে আবেদন করে অভিবাসী হওয়া যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি নিরাপদও বটে।
কানাডার বর্তমান ট্রুডো সরকার গণহারে অভিবাসী নেয়ার জন্য একটি ফ্লাডগেট খুলে দিয়েছেন। অথচ এটাকে এভাবেই পোর্ট্রে করা হচ্ছে। জানাগেছে, এই ১২ লাখের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ ভাগ ইকোনমি ক্লাস (স্কিলড ওয়ার্কার, বিজনেস ইত্যাদি) থেকে নিতে।
আরো পড়ুনঃ ইতালি যেতে আবেদন করবেন যেভাবে
বাকিটা পূরণ হবে ফ্যামিলি ক্লাস (স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি অথবা কিছু ক্ষেত্রে অন্য আত্মীয়), রিফিউজি ক্লাস এবং মানবাধিকার ইস্যুতে কানাডার যে কমিটমেন্ট সেখান থেকে। পরের দুই বছরও হয়তো এমনভাবে আরো ৮ লাখ ইমিগ্র্যান্ট গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে যেভাবে আবেদন করবেন:
প্রতারকদের খপ্পরে না পড়ে কানাডার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জেনে সরাসরি আবেদন করা যাবে। আর নিজে না বুঝলে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত কোনো লাইসেন্সড কানাডীয় ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। মোট কথা, কানাডা যেতে চাইলে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, লম্বা সিলেকশন প্রসেসের মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই যেতে হবে। শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই।
অনলাইনে আবেদন লিংকঃ https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html
এই মুহূর্তে যেসব ভিসায় কানাডায় লোক যাচ্ছে:
এক্সপ্রেস এন্ট্রি: এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে প্রতি পনেরো দিনে ৩৫০০-৪০০০ স্কিলড ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে কানাডা যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
কারা পাচ্ছেন এই ভিসা?
যারা অত্যন্ত অল্প বয়সেই সিএলবি ৯ অর্থাৎ আইইএলটিএস এ ৯ এর মধ্যে ৮.৫ পাচ্ছেন, যাদের জব কানাডার অকুপেশন ইন ডিমান্ড লিস্টে আছে, যাদের ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজে স্কিল আছে, যাদের আপন ভাই-বোন কানাডায় আছে, যাদের কানাডিয়ান এডুকেশনাল ডিগ্রি বা চাকরির অভিজ্ঞতা আছে তারাই পাচ্ছেন নোমিনেশন।
আরো পড়ুনঃ ভিসা ছাড়াই ১০৩ দেশের নাগরিকদের ওমান ভ্রমণের সুযোগ
কাজেই আইইএলটিএস বা ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজে টেস্ট না দিয়ে, কানাডা থেকে এডুকেশনাল ক্রেডেনশিয়াল এসেসমেন্ট না করিয়ে যে প্রক্রিয়া শুরুই হয় না, সেখানে টিকে থাকতে গেলে এই মুহূর্তে সিআরএস স্কোর ৪৭০ দরকার।
ফ্যামিলি স্পন্সরশীপ:
ফ্যামিলি রেউনিফিকেশন কানাডিয়ান ইমিগ্র্যাশনের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক। এই প্রক্রিয়ায় ২০২০ সালে ২০ হাজার প্যারেন্টস অ্যান্ড গ্র্যান্ডপারেন্টস আসতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে লটারির মাধ্যমে মাত্র ৫০০০ কোটা দিয়ে।
আগামী ২৮শে জানুয়ারি থেকে আবেদনপত্র জমা নেয়া শুরু হবে। কিন্তু এখানেও কেবলমাত্র যোগ্য কানাডিয়ান সিটিজেন বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্টরাই স্পন্সরশীপের আবেদন করতে পারবেন।
কমপক্ষে তিন বছর সিআরএর নোটিশ অফ এসেসমেন্ট অনুযায়ী লো ইনকাম কাট অফ বা লাইকো +৩৫% মিনিমাম ইনকাম থাকলেই আবেদন করা যাবে। অর্থাৎ অত্যন্ত হাই ইনকাম না থাকলে এই আবেদন করা যাবে না।
প্রভিন্সিয়াল নমিনেশন:
প্রভিন্সিয়াল নমিনেশন নিয়ে, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে কানাডার আটলান্টিক তীরের চারটি প্রভিন্স এবং অন্যান্য কম পরিচিত প্রভিন্সগুলোতে ইমিগ্র্যান্টরা যেতে পারবে।
এক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রভিন্সেরই প্রথম পছন্দ যারা এক্সপ্রেস এন্ট্রি পুলে ঢুকে আছেন তাদেরকেই। এ ছাড়া এইসব প্রভিন্সে যাদের আত্মীয় স্বজন আছে বা জব অফার আছে শুধু তারাই প্রভিন্সিয়াল নমিনেশন পাচ্ছেন এবং যাদের পেশা অকুপেশন ইন ডিমান্ড লিস্টে আছে।
রিফিউজি অ্যান্ড প্রোটেক্টেড পারসন:
সারা বিশ্ব থেকে যেসব নির্যাতিত মানুষ কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা করে তাদেরকেও অভিবাসনের সুযোগ দেয়া হবে। এ ছাড়া অভিবাসীদের জন্য মেডিকেল ইনডমইসিবিলিটির আইনও আগের চেয়ে অনেক বেশি শিথিল করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নবায়ন করতে পারবে ওমান প্রবাসীরা
এদিকে বাংলাদেশ থেকে জব ভিসা এবং স্কুলিং ভিসা দিয়ে কানাডা লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। মূলত স্কুলিং ভিসার মাধ্যমে শিশুসন্তানকে কানাডা পাঠিয়ে বাবা-মার কানাডাতে স্থায়ী হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।
সেইসাথে আইইএলটিএস ছাড়া, কোনো শিক্ষাগত বা কাজের দক্ষতা ছাড়াই শুধু টাকার বিনিময়ে তথাকথিত জব অফার নিয়ে কানাডায় যাওয়া অসম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post