সৌদি আরবের আভায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রবাসী সোলাইমানের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে এদিন সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হয় সোলাইমানের মরদেহ।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় ‘সৌদি থেকে ছেলের লাশ আনার টাকা পাব কই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সরকারি খরচে সোলাইমানের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) অ্যাডভোকেট সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (সাজী)।
সোলাইমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দক্ষিণ ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি সৌদি আরবের আভা শহরে একটি সেলুনে কাজ করতেন।
পরিবারসূত্রে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান সোলাইমান মিয়া। সম্প্রতি পরিবারিক আয়োজনে মোবাইল ফোনে বিয়েও করেন তিনি। গত রমজানের আগেই দেশে এসে নববধূকে বাড়িতে আনার কথা ছিল। কিন্তু নববধূর হাতের মেহেদি রঙ মুছে যাওয়ার আগেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার বাবা-মা-বোন ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছিল সোলাইমানের বাড়ির চারপাশ। কোনো সান্ত্বনাই তাদের কান্না থামাতে পারছিল না। বিলাপ করতে করতে সোলাইমানের মা বলতে থাকেন, বউয়ের হাতের মেহেদির রঙ এখনও মুছেনি। তার আগেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কফিনের পাশে বসে আহাজারি করে বলছিলেন সরকারের সহযোগিতায় আমি আমার ছেলের মুখটা শেষবারের মত দেখতে পারলাম।
সোলাইমানের জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) অ্যাডভোকেট সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (সাজী) বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘সৌদি থেকে ছেলের লাশ আনার টাকা পাব কই’ শিরোনামে দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমার নজরে আসে। সংবাদটি দেখে আমি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে সোলাইমানের বড় ভাই ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করি। পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করতে বলি তাদের। আবেদন করার পর আমি আবেদনটি মন্ত্রীর হাতে দিয়ে বিস্তারিত জানাই।
তিনি আরও বলেন, আবেদনটিতে জরুরি ব্যবস্থা নিন লিখে স্বাক্ষর করে মন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দেন- এই মরদেহ দেশে আনতে যখন যেখানে যোগাযোগ করার প্রয়োজন আমি যেন যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেই। আমি কাগজগুলো ওয়েজ আর্নার বোর্ডে পাঠিয়ে কথা বলি।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল সৌদি আরবের জেদ্দায় পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার প্রেক্ষিতে শুক্রবার সোলাইমানের মরদেহ দেশে এসেছে। তার দাফনের খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। দশ দিন পর তিন লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হবে সোলাইমানের পরিবারকে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post