জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলার’ হুমকি ও ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং চরমোনাই পীরের ছেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পৃথক আরো একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আজ সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর মামলা ২টি আদেশের জন্য রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আইনজীবী আব্দুল মালেক বাদী হয়ে এই ২টি মামলার আবেদন করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার বাদীর জবানবন্দি গ্রহনের পর মামলা ২টি আদেশের জন্য রেখেছেন।
আরো পড়ুনঃ অবশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাড়ালো সৌদি ও কাতার
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন আগে মৌলবাদী অপশক্তি মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যা দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ।
সম্প্রতি ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মীয় সংগঠন গুলোর ক্রমাগত হুমকির মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিছুদিন আগে রাজধানী ঢাকার দোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
তেমনই একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবে এবং ওই বুড়িগঙ্গায় ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন।’
একইদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম একটি অনুষ্ঠানে মামুনুল হকের সুরেই কথা বলেন। এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ওয়াজ মাহফিলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী ভাস্কর্য নির্মাণের আবারও বিরোধীতা করে বলেন, ‘‘কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে।’’
ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মীয় নেতাদের এমন উগ্র বক্তব্যের পর তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। তার দুইদিন পর ১ লা ডিসেম্বর মাঠে নামে দেশের ৬০টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের সংগঠন।
আরো পড়ুনঃ পরকীয়া করে হাতেনাতে ধরা খেলো ওমান প্রবাসীর স্ত্রী
নেতৃবৃন্দ দাবি তোলেন, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননাকারী জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রথম দিকে অনেকটা নীরব থাকলেও পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post