প্রথম আনুষ্ঠানিক তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হয় ১৮৫০ সালে। সেই থেকে নিকট অতীত ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের উষ্ণতম বছর।
এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (এনওএএ), মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাসহ পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা।
গবেষকেরা বলছেন, তাপমাত্রায় ২০২৩-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে ২০২৪। এ আঁচ পাওয়া গেছে বছরের প্রথম দিকেই, অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে।
কিন্তু হঠাৎ পৃথিবীর উত্তাপ কেন ঊর্ধ্বমুখী হলো? বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
পৃথিবী উত্তপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণগুলো মনুষ্যসৃষ্ট, বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের উপজাতক হিসেবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ও জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়া ‘এল নিনো’ আরেকটা কারণ। ‘এল নিনো’ এমন এক প্রাকৃতিক ঘটনা, যা প্রতি ২-৭ বছর অন্তর ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘এল নিনো’র কারণে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা অস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে তৈরি হতে পারে খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঝুঁকি।
যুক্তরাজ্যের মেট অফিস জানাচ্ছে, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত আবহাওয়ার যে গড় ছিল, সেটাকে অতিক্রম করেছে ২০২৩ সালের তাপমাত্রা (১৪ দশমিক ৯৮), যা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে প্রায় ১ দশমিক ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও বৈশ্বিক উষ্ণতার রেকর্ড ছুঁয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জানুয়ারির তাপমাত্রার গড় ছিল ১৩ দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছরের জানুয়ারি থেকে শূন্য দশমিক ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম কোপারনিকাসের মতে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি, যা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
শুধু তা-ই নয়, গত বছরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টানা ৯ মাস ধরে আবহাওয়ার রেকর্ড ভাঙার খেলা চলছে। বিগত যেকোনো সময়ে নির্দিষ্ট এই মাসগুলোর চেয়ে টানা এই সময়ে গরম বেশি পড়েছে।
২০২৪ নিয়ে শঙ্কা
এনওএএ বলছে, এ বছরের দাবদাহ বেশকিছু রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারে। সংস্থাটির মতে, শতকরা ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ আশঙ্কা আছে ২০২৪ গরম আবহাওয়ার বছরগুলোর মধ্যে শীর্ষ ১০-এ থাকবে।
শতকরার ভাগ একটু কমিয়ে ৯৯ দশমিক ১-এ আনলে শীর্ষ ৫-এ অবস্থানের জোর ইঙ্গিত করছেন গবেষকেরা। সাম্প্রতিক সময়ের আবহাওয়া বিশ্লেষণ ও উল্লেখযোগ্য তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রায় ৩৩ ভাগ আশঙ্কা আছে, তাপমাত্রা ২০২৩-কে ছাড়িয়ে যাবে।
এনওএএ’র প্রধান বিজ্ঞানী সারা ক্যাপনিকের কাছে এসব পরিস্থিতি রীতিমতো স্তম্ভিত হওয়ার মতো। তিনি মনে করেন, কার্বন নিঃসরণ একেবারে শূন্য না হওয়া পর্যন্ত গরম বাড়বে এবং প্রতি বছরই আগের রেকর্ড ভাঙবে।
গত বছরের চরম আবহাওয়া সৃষ্ট দাবানল, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলো এবার আরো বাড়তে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পরামর্শ, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাজ করতে হবে সম্ভাব্য সব পর্যায় থেকেই। মানুষকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলাও শিখতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে বিশেষজ্ঞের মতামত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post