ফের আবার অস্থির অবস্থা তৈরি হয়েছে ইজরায়েলে। এবার অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মূলত ইরানের তরফ থেকে হামলা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে। এই হামলায় ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। আমেরিকা ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনী ইরানের তরফ থেকে হামলা চালানো একের পর এক ড্রোন মিসাইল গুলি করে নামাচ্ছে।
তবে জানলে অবাক হবেন, বছরের পর বছর ধরে ইজরায়েলকে রক্ষা করে আসছে ইজরায়েলের তুরুপের তাস আয়রন ডোম । বছরের পর বছর ধরে আকাশের বুক চিরে আসা ড্রোন, মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়ার কাজ চালিয়ে আসছে এই আয়রন ডোম। ইজরায়েলের অস্ত্র ভান্ডারে যে সকল অস্ত্র রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হাতিয়ার হল এই আয়রন ডোমটি।
গত গ্রীষ্মে পিআইজে গোষ্ঠী যে সকল মিসাইল হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলের উপর তার ৯৭% মিসাইল আকাশেই নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়েছিল ইজরায়েলের আয়রন ডোম। হামাসদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতেও ইজরায়েলের অন্যতম মূল হাতিয়ার হল আয়রন ডোম। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের মানুষের কাছে ইজরায়েলের এই আয়রন ডোম নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। যদি সহজ ভাষায় বলা যায় তাহলে এটি হলো এমন একটি অস্ত্র যা ইজরায়েলের পরিমণ্ডলে অদৃশ্য অবস্থায় থেকে গোটা দেশকে এই ধরনের হামলা থেকে রক্ষা করে।
এটি হলো একটি অ্যান্টি রকেট, অ্যান্টি মর্টার, অ্যান্টি আর্টিলারি সিস্টেম। এই সিস্টেম ৪ কিলোমিটার থেকে ৭০ কিমি দূরের রকেট মিসাইল ধ্বংস করে দিতে পারে। শুধু ধ্বংস করে দেওয়া নয়, ধ্বংস করে দেওয়ার পাশাপাশি ওই রকেট অথবা মিসাইল সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয় কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে। আয়রন ডোমের কার্যকারিতা এবং ক্ষমতার সম্পর্কে এমনই তথ্য পাওয়া যায় কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের রিপোর্টে।
আরও যদি সহজ ভাষায় বলা হয় তাহলে বলা যেতে পারে, এটি হলো একটি ব্যাটারি সিরিজ, যা র্যাডারের মাধ্যমে শর্ট রেঞ্জের রকেট, মিসাইল ইত্যাদি সনাক্ত করে থাকে এবং তাদের আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। এই সিস্টেমের প্রতিটি ব্যাটারিতে তিন থেকে চারটি করে লঞ্চার, ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি র্যাডার থাকে। এই সিস্টেম তৈরি করেছে ইজরায়েলের রাফায়েল ডিফেন্স সিস্টেম এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা জায়ান্ট যৌথভাবে। অন্ততপক্ষে ১০টি এই ধরনের সিস্টেম ২০২১ সাল পর্যন্ত ইজরায়েল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিছিয়ে দিয়েছে। এই সকল প্রত্যেকটি সিস্টেম ৬০ বর্গমাইল জনবহুল এলাকা রক্ষা করতে সক্ষম।
২০০৭ সালে প্রথম আয়রন ডোমের কাজ শুরু করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ২০১১ সালে সেগুলির ব্যবহার শুরু হয়। যখনই কোন ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের দিকে ধেয়ে আসে তখন প্রথমেই আয়রন ডোম সেই ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত করে। তারপর তার গতিপথ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পাঠানো হয় কন্ট্রোল রুমে। যদি দেখা যায় ওই ক্ষেপণাস্ত্র জনবহুল এলাকায় আঘাত হানার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য আয়রন ডোম পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে তাকে ধ্বংস করে দেয়। তবে যদি দেখা যায় যে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্র অথবা ফাঁকা জায়গার দিকে এগিয়ে চলেছে তাহলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আয়রন ডোমের ক্ষেপণাস্ত্র সাশ্রয় পায়। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে এই ধরনের একেকটি আয়রন ডোমের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post