আতিক হোসেন বলেন, “আমি অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য চাইলাম ছেলেকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য, আর পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল। বিষয়টা আমার বোধগম্য নয়।”
ষোলো দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে আরেক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
মিশিগান রাজ্যের ওয়ারেন সিটিতে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বেলা পৌনে ২টার নিজের বাড়িতেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হোসেন আলী রাজি (১৯)।
পুলিশের ভাষ্য বলছে, পরিবারের ফোন কল পেয়ে তারা ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। সে সময় ওই তরুণ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে এলে পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি করে।
অন্যদিকে নিহতের স্বজনরা বলছেন, হোসেন আলী অস্বাভাবিক আচরণ দেখে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কেন তাকে গুলি করছে, তা তাদের বোধ্যগম্য নয়।
ওয়ারেন সিটি পুলিশের কমিশনার চার্লস রুস্টম বলেন, শুক্রবার দুপুরে ৯১১ এ পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন আসে। সাথে সাথেই অ্যাম্বুলেন্সসহ ৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে পৌছান।
“পুলিশ অফিসাররা ওই যুবকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখতে পেয়ে তা ফেলে দিতে বলে। কিন্তু ওই তরুণ পুলিশ অফিসারদের দিকে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে যান। এ অবস্থায় পুলিশ অফিসাররা আত্মরক্ষায় গুলি ছোড়েন এবং তাতে হোসেন আলী রাজি জখম হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, এই বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।
এদিকে হোসেন আলী রাজির এমন মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন তার বাবা-মা, ভাই-বোন।
নিহতের বাবা মোহাম্মদ আতিক হোসেন বলেন, “দুই ছেলে ও আমি সকালে একসাথে ফজরের নামাজ পড়ি। তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। দুপুরের দিকে ওর মা ও মেজ ছেলে আমাকে জানায় হোসেন অসংলগ্ন আচরণ করছে। এ অবস্থায় আমার মেজ ছেলেকে দিয়ে ৯১১ নম্বরে কল দেই।
“কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আমরা নিরাপদে আছি কিনা জানতে চায়। আমরা গ্যারেজের গাড়ির ভিতর আছি বলার কিছু সময়ের মধ্যে ২/৩টি গুলির শব্দ শুনতে পাই।”
তিনি বলেন, “পরে পুলিশ অফিসাররা আমাদেরকে ডেকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে সবার জবানবন্দি নেন। আমরা সবাই বাসায় ফিরে আসলে বিকাল ৪টার দিকে খবর আসে আমার ছেলে মারা গেছে।”
আতিক হোসেন আরও বলেন, “আমি অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য চাইলাম ছেলেকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য, আর পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল। বিষয়টা আমার বোধগম্য নয়। কী এমন অপরাধ করল আমার ছেলে, যে কারণে ওকে গুলি করে মারতে হলো?”
এ ঘটনায় ন্যায়বিচার আশা করছেন আতিক।
তিনি জানান, সোমবার ছেলের লাশ বুঝে পাওয়ার পর ইসলামিক সেন্টার অব ওয়ারেনে দুপুরে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌসরভার সুপাতলার বাসিন্দা প্রায় ১৬ বছর আগে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে হোসেন আলী রাজি ছিলেন দ্বিতীয়।
এদিকে সেখানকার হ্যামট্রমিক সিটির ডেপুটি মেয়র কামরুল হাসান এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটি গুলিতেই রাজি লুটিয়ে পড়ার পর আরো কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিতের মধ্যে কী পুলিশের প্রতিহিংসাপরায়নতার প্রকাশ ঘটেনি?”
কামরুল হাসান অবিলম্বে পুলিশের বডি ক্যামেরার ছবি প্রকাশ এবং এই ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ দুপুরে নিউ ইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কে উইন রোজারিও নামের আরেক বাংলাদেশি একইধরনের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post